ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্বাচন: নুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্বাচন: নুর

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের অস্তিত্বে নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ভিপি নূর, কল্যাণ পার্টি কিংবা বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার নির্বাচন নয়, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্বাচন।

এ নির্বাচন যেভাবেই হোক অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে।

সোমবার (৮ মে) বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা ও সংকট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ।

শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে নুরুল হক নুর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি গড়ে ওঠা বাংলাদেশকে আজকে আজকে সংঘাতের বাংলাদেশে পরিণত করছে এ সরকার। আজকে মুক্তিযোদ্ধা, মুরুব্বি কিংবা রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের কারো কোনো সম্মান নেই, শিষ্ঠাচার নেই। আওয়ামী লীগের হোমরা-চোমরাদের উৎপাতে এলাকায় মানুষ থাকতে পারে না।

শেখ হাসিনার সরকার বিদেশিদের গোলামি করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বিদেশিদের বলছে, আমাকে ক্ষমতায় রাখো। বিনিময়ে দেশে সম্পদ, জমিজমা নিয়ে যাও, নিরাপত্তাকে ভন্ডুল করে দাও, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে ধূলিস্মাৎ করে দাও। শুধু আমি যে কয়দিন জীবত আছি, আমাকে ক্ষমতায় রাখো। আমি আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকতে চাই। যে কারণে আজকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলেছে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় কোনো সমাঝোতা আসেনি। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক নিরাপত্তা কোনোটাই আজকে নিরাপদ নয়। এ সরকার সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য। অর্থনৈতিক জোনের নামে ভিনদেশি কিছু কিছু দেশকে বাংলাদেশে মিনি ক্যানটমেন্ট গড়ে তোলার সুযোগ দিয়েছে। দেশের আনসার থেকে শুরু করে সচিবালয়, মন্ত্রী পরিষদ, রাজনৈতিক দলের কমিটিতেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আধিপত্য আছে। বর্তমান সরকার গত ১৪ বছরে তিলে তিলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা আরও বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে বিএনপি বা বিরোধী দলকে ছাড় দিবে, প্রয়োজনে মন্ত্রিত্ব দেবে। এটি কি আওয়ামী লীগের কমিটি যে আপনি কাউকে ভাইস চেয়ারম্যান, সহ-সভাপতি, জয়েন্ট সেক্রেটারি করবেন? আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? আপনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, সংঘাত-সহিংসতামুক্ত, বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীনতার ৫২ বছরেও তা আমরা অর্জন করতে পারিনি। দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অযোগ্য রাজনীতিবিদদের কারণে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি আজ মুক্তিযুদ্ধের নামে, সাম্প্রদায়িকতার নামে পক্ষ-বিপক্ষে নানাভাবে বিভক্ত।

তিনি আরও বলেন, আমরা (গণঅধিকার পরিষদ) একটি জোটে (গণতন্ত্র মঞ্চ) ছিলাম। সম্প্রতি আমরা সেখান থেকে বের হয়ে গেছি। কেন বের হলাম, সেটা আমরা বলেছি। তবে আমরা জোটে না থাকলেও বর্তমান ফ্যাসিবাদের পতনে বাংলাদেশকে রক্ষার যুগপৎ আন্দোলনে আমরা রাজপথে থাকবো।

তিনি বলেন, আজকে দেশ যে চরম সংকটে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম করা, কথা বলা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। আজকে দেশের রিজার্ভের অবস্থা ভয়াবহ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমরা আরও বেশি সংকটে পড়েছি।

নুরুল হক নুর আরও বলেন, আমাদের প্রবাসীরা প্রতি বছর দেড় বিলিয়ন, দুই বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ পাঠাচ্ছে। আমাদের গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি আয় হচ্ছে৷ আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে ডলার আনছে। তাহলে কেন আমরা অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়লাম? সংকটে পড়েছি এই সরকারের লুটেরা এমপি, মন্ত্রী, আমলারা দেশর টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ফাঁক-ফোঁকরে, আমদানি-রপ্তানির নামে বাইরে সম্পত্তি গড়েছে।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুবাইতে ৪৫৯ জনের সম্পত্তি নিয়ে আদালত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক)। তারা এখন পর্যন্ত ৪৫৯ জনের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা করবে না। কারণ এদের প্রত্যেকেই সরকারি দলের নেতা, সরকারি দলের সুবিধাভোগী আমলা। থুথু উপরে মারলে মুখে পড়ে। এই সরকার যদি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, প্রত্যেকটা লোক ধরা পড়বে। তারা সরকারি দলের লোক।

তিনি আরও বলেন, ইব্রাহিম ভাইয়ের কল্যাণ পার্টি, আমাদের গণঅধিকার পরিষদ কিংবা বিএনপি লোকেরা যদি দুর্নীতি করতো, তাদের তো ক্রসফায়ার দিতো এতদিনে। এদের বিচারের মুখোমুখি করতো। সুতরাং অর্থপাচারের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও অর্থপাচারকারীদের ধরা যাচ্ছে না। কারণ, এই সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশের দায়িত্ব আমাদের হাতে দেন। এক বছরে আমরা দেশের গতিপথ পরিবর্তন করে দেবো।

বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের উপদেষ্টা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার পোদ্দারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরবষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মহসিন রশিদ, নাবিকের সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।