ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ভোট টানা বড় চ্যালেঞ্জ

সিসিকে নৌকার পালে হাওয়া, বিরোধী ভোটের আশায় বাবুল!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
সিসিকে নৌকার পালে হাওয়া, বিরোধী ভোটের আশায় বাবুল!

সিলেট: বিএনপির প্রার্থী নেই। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও রণেভঙ্গ দিয়েছেন।

মেয়র পদে ৭ প্রার্থী থাকলেও খবর নেই ৫ জনের। কেবল দুই প্রার্থীর দেখা মিলছে প্রচার-প্রচারণায়।

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিপরীতে মাঠ তপ্ত করে রেখেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।

তবে মাঠেঘাটে প্রচার-প্রচারণার গতিতে আনোয়ারুজ্জামানের ধারেকাছেও নেই বাবুল। তিনি কেবল বিরোধী (বিএনপির) জোটের ভোটের আশায়। মাঠের অবস্থাও তাই বলছে।

বিরোধী ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে সেই ভোট মেয়র পদে বাবুলের বাক্সেই পড়বে এমনটি ধারণা সকলের। কিন্তু বিএনপির কঠোর হুঁশিয়ারিতে নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবেন কি না, আর গেলেও তারা মেয়র পদে মহাজোটের অংশ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার পুরুষ ও মহিলা মিলে ৩৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে এবার ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে জমজমাট নির্বাচন। আর নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী অত্যাধিক থাকায় ভোট উৎসব বেশি।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে সিসিকে মেয়রের মসনদ ছিল বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর দখলে। ফলে নগরে ভোটের মাঠে আধিপত্য গড়ে তোলেন আরিফ। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ভোট যুদ্ধ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন আরিফুল হক চৌধুরী। সেই সঙ্গে দলের আনুগত্য স্বীকার করে প্রায় দেড় ডজন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীও রণেভঙ্গ দেন। তবে বিএনপির নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হন দলের ৪৩ নেতাকর্মী। যাদের দল থেকে ইতিমধ্যে বহিষ্কারও করা হয়েছে।   

সিলেট সিটি নির্বাচন যখন সন্নিকটে, তখনই সামনে এসেছে ভোটারদের উপস্থিতির বিষয়টি।

সিলেট নগরীতে আওয়ামী লীগ আরিফুল হক চৌধুরী ও বিএনপির সমর্থিত অন্তত ২৫ ভাগ করে ভোটার ব্যতিরেকেও জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ভোট আছে অন্তত ১৫ শতাংশ। আর নীরব ভোটার রয়েছেন অন্তত ৩৫ ভাগ। আর এসব ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

তাছাড়া নির্বাচনে সহিংসতা ও ইভিএম পদ্ধতিতে একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারেন, এমন ধারণাও ভোটারদের কাছে পৌছে দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমবারের মতো এবার সিটিতে অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটাররা ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। মূলত কাউন্সিলরদের ভোট দিতেই কেন্দ্রে যাবেন ভোটাররা। যদি নগরের অর্ধেক মানুষও কেন্দ্রমুখী হন, তাহলে বিরোধী বলয়ের ভোট থাকবে। আর এই ভোটগুলো নৌকার বিরুদ্ধে গেলে অঘটন ঘটতে পারে! এমন আশঙ্কায় সিলেটে নির্বাচনী মাঠ সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ।  

তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল এবার নির্বাচনের শুরুতে কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলেন। হাতপাখার প্রার্থী বয়কট করার পর তিনি নির্বাচনে আরও সক্রিয় হয়েছেন। প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও নির্বাচনী সভা করছেন। বাবুলের মুখে অভিযোগই বেশি।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে তিনি জয়ী হবেন। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ লাঙ্গলকেই ভোট দেবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে নানা আশঙ্কা আছে।

ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে একাধিক অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবং মাঠের প্রশাসন আওয়ামী লীগের পক্ষেই রয়েছে। তবে তার পক্ষে নগরবাসী রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে সিলেট আওয়ামী লীগে বিরোধী ভোট নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে টানা হচ্ছে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনকে। ফলে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতারা ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়ক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। নির্বাচনের শুরু থেকেই তিনি সিলেটে আসা-যাওয়া করছেন। বরিশালের নির্বাচন শেষ হওয়ার একদিন পর ১৪ই জুন তিনি সিলেটে এসেছেন।

গতকাল থেকে তিনি মাঠ পর্যায়ে প্রচারণায় নেমেছেন। নগরের শাহপরাণ (রহ:) মাজার এলাকায় তিনি গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি নৌকার পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চান।

এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আহমদ চৌধুরী নাদেলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি টিম সিলেটে অবস্থান করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও গত বৃহস্পতিবার প্রচারণা চালান ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এর আগে চিত্রনায়ক ফেরদৌসও প্রচারণায় অংশ নেন।

এদিকে, প্রচারণাকালে সাংবাদিকদের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার উঠেছে। মানুষ সিলেটের উন্নয়নের জন্য নৌকাকে চায়। এ কারণে সিলেটে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি না থেকেও আছে। প্রায় ৪৩ জন বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। জামায়াতের আছে কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী। সুতরাং বিএনপি ও জামায়াত নেতারা প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে।

তারা জানান, বিরোধী বলয়ের ভোট নিয়ে অস্বস্তি আছে। কিন্তু বিরোধী ভোটে ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না।

এর কারণ তুলে ধরে তারা বলেন, সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা এবার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এজন্য আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক নৌকার পক্ষে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
এনইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।