ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

ঈদে নিজ এলাকায় সরব জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

মো: আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
ঈদে নিজ এলাকায় সরব জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

ময়মনসিংহ: আর মাত্র কয়েক মাস পরেই দেশের সাংবিধানিক নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে দেশের চলমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক সমীকরণে এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও সচেতন মহল।

এই অবস্থায় ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই দলীয় মনোনয়নে ছিটকে পড়তে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।  

ফলে পবিত্র ঈদুল আজাহার ধর্মীয় এই উৎসবকে সামনে রেখে মাঠের জনপ্রিয়তায় নিজের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করতে চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর তাই কিছুটা আগেভাগেই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। এতে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জের পাড়ামহল্লার চা স্টলগুলোতেও।    

সম্প্রতি বাংলানিউজের অনুসন্ধানে ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় এলাকার ভোটার ও রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।  

তারা জানায়, নির্বাচনী মাঠের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিগত সময়ে শুধুমাত্র নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকলেও সম্প্রতি সমাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের সক্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেওয়াসহ গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে করর্মদন করছেন তারা। সেই সঙ্গে দাওয়াত পেলেই খেলাধুলা বা বিয়ে সাদির অনুষ্ঠানে স্বদলবলে হাজির হচ্ছেন হেভিওয়েট  প্রার্থীরাও। এর ফলে গ্রামের চা স্টলগুলোতেও এখন নির্বাচনী আলাপ চলছে বেশ জোরেসুরেই।  

প্রচারণায় বেশ এগিয়ে রয়েছে সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদসহ প্রায় এক ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী গ্রামে গ্রামে নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে গণসংযোগকালে তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্বলিত লিফলেট বিলি করে জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতার।    

এর মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহাবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিলুফার আঞ্জুম পপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিবহণ ব্যবসায়ী সোমনাথ সাহা ও আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন আলম উল্লেখযোগ্য।

তবে এই আসনের বিএনপি নেতারা নির্বাচনী মাঠে এখনো সরব না হলেও আন্দোলন সংগ্রামে দলীয় কর্মসূচি পালনে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসাইন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকায় নির্বাচনী প্রার্থীতায় ভালো অবস্থানে আছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহাম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরণ ও ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল হক।      

গণসংযোগে পিছিয়ে নেই ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদও। রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব পালনে দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকাতেও নিরঙ্কুশ আধিপত্য ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি সময়ে তার জনসংযোগে এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানের বার্তা মিলেছে।

তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পর্যন্ত না থাকলেও নির্বাচনের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে প্রস্তুত বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা। তারা হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার এবং তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির একমাত্র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। এর মধ্যে কর্মীবান্ধব নেতা হিসাবে পরিচিত মোতাহার হোসেন তালুকদার দলের জেলা কমিটির দ্বায়িত্বে থাকায় বর্তমানে তৃণমূলেও তার অবস্থান শক্ত বলে দাবি করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।    

বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যতিক্রমী অবস্থানে রয়েছে দেশের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনটি। এই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। গত কয়েক বছর ধারে তিনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগে সরব থাকায় নির্বাচনী মাঠে তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী। আসনটিতে প্রিন্সের সঙ্গে বিএনপির মনোনয়নে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান ওমর রুবেল। সামাজিক কর্মকাণ্ডে এলাকায় তার সুখ্যাতি রয়েছে।        

স্থানীয় নেতারা জানান, এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং দলীয় পরিমণ্ডলে সরব থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। সেই সঙ্গে দলের ভেতরেও রয়েছে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী।    

রাজনৈতিক অঙ্গনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ (সদর) বিভাগীয় নগরীর এই আসনটি। এই আসনের সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ বর্তমান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী। ব্যক্তি জীবনের স্বচ্ছতার প্রতীক হিসাবে ভোটারদের মধ্য সুনাম থাকলেও বয়োজ্যেষ্ঠ এই প্রভাবশালী জাতীয় নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার কারণে এলাকার তার যাতায়াত নেই।      

আর এ কারণেই এই সুযোগটি কাজে লাগাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নির্বাচনী প্রচারণায় তারা উত্তাপ ছড়াচ্ছেন নগরীর রাজপথ থেকে গ্রামগঞ্জের পথঘাটেও। এরমধ্যে সাবেক ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, স্বাচিপ নেতা ডা. এম এ আজিজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল উল্লেখযোগ্য।        

এই আসনে ক্ষমতাসীনদের বিপরীতে প্রার্থী হিসেবে একক অবস্থান ধরে রেখেছেন ধানের শীষ প্রতীকে গতবার মনোনয়ন পাওয়া নব্বই দশকের মাঠ কাঁপানো ছাত্রনেতা মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রায় সোয়া লাখ ভোট পেয়ে দেশজুড়ে বিরল কীর্তি গড়েছিলেন। এবারও তিনি নির্বাচনী মাঠের গণসংযোগে পুরোমাত্রায় সরব রয়েছেন।    

এছাড়াও নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ আগে থেকেই ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ ধরে রেখেছেন বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নূরুল কবীর শাহীন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি মাঠে সক্রিয়  রয়েছেন। আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপির একাংশের নেতা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু।

তবে এই আসনটিতে জনবিচ্ছিন্ন অবস্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সর্ম্পক সাপে-নেউলে। যার কারণে এবার আসনটি নিজেদের কব্জায় নিতে চায় আওয়ামী লীগ।        

সে লক্ষ্যে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, তার ভাতিজা উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুমন, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ হাসান তূর্ণসহ আরও অনেকেই।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের বাদ বাকি সংসদীয় আসনগুলোতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় তেমনভাবে মাঠে নেই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের প্রার্থীরা তুমুল নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।  

যদিও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে সোজা সাপটা দাবি করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।    

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বা বিএনপির কেউ নির্বাচনী প্রচারণা বা গণসংযোগ করছি না। মূলত সাংগঠনিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে আন্দোলন বেগবান করা এবং দেশের নাজেহাল পরিস্থিতি জনগণের কাছে তুলে ধরতে বিএনপি তৃণমূলে সাংগঠনিক কাজ করছে। এতে নির্বাচনী গণসংযোগ বা প্রচারণার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বর্তমানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করাই বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য।          

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। আমরা ময়মনসিংহের সবকটি আসনেই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে আছি। আমরা সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে দলীয় মনোনয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।