ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আগস্ট এলেই শেখ হাসিনার মায়া কান্না আসে: চরমোনাই পীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
আগস্ট এলেই শেখ হাসিনার মায়া কান্না আসে: চরমোনাই পীর

ঢাকা: আগস্ট মাস এলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়া কান্না আসে তার পরিবারের জন্য। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে যারা গুম-খুন হয়েছে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কান্না পায় না।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে আয়োজিত এক সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর অনেক মা সন্তানকে হারিয়েছেন। অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছেন। অনেক ছেলে মেয়ে তার পিতাকে হারিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আজ এদের কান্নার ব্যাপারে আপনার কি একটুও দয়া না হয় না? আপনি যদি আজকে আপনার বাবা এবং পরিবারের জন্য যদি কান্না করতে পারেন। আর এদের জন্য যদি কান্না না আসে তার মানে এটা প্রমাণ হয় যে আপনার এই কান্না সম্পূর্ণ ধোঁকাবাজি এবং লোক দেখানো।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি মন্তব্য করে চরমোনাই পীর বলেন, দেশে সাম্য ও ন্যায় বিচারের পরিবর্তে আজকে একই বিচারের দাবিতে ও একই অভিযোগের কারণে আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণ করে তাদের (আওয়ামী লীগ পন্থী) খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু যারা বিরোধী দলের রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে একই মামলায় যাবজ্জীবন জেলসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এসবকে কি ন্যায়বিচার বলা যায়?

সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক বা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সব দলের দাবি বলে উল্লেখ করেন তিনি। আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত বাংলাদেশের সর্ব মহলে সকল প্রকার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছে, তত্ত্বাবধায়ক বা জাতীয় সরকারের অধীনে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। যা আজকে সকলের ন্যায্য দাবি। এই ন্যায্য দাবিকে আপনি (শেখ হাসিনা) উপেক্ষা করছেন। সেই ১৪ এবং ১৮ সালের মতো আপনারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার চেষ্টা করছেন। যার মাধ্যমে আপনারা জনগণকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিতে চাচ্ছেন। এই ধোঁকাবাজি বাংলাদেশের মানুষ আর বাস্তবায়ন হতে দেবে না। আজকের দিনকে যদি কেউ রাত বলে এটা যেমন অবাস্তব, আর আপনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে সেটাও তেমনই অবাস্তব।

বাংলাদেশের যে শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে তার মাধ্যমে কখনোই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মতো সিলেবাস শিক্ষাক্রমে নেই। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে আপত্তিকর বিষয় শেখানো হয়। যা অসভ্যদের কালচার।

গত ২৮ জুলাই আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের হামলায় মাদরাসা ছাত্র রেজাউল করিম নিহতের বিষয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, এই মাদরাসার ছাত্র নিহতের বিষয়ে সরকার কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। এ সকল মাদরাসার ছাত্ররা যখন দুই হাত তুলে দোয়া করে তখন আল্লাহ তাদের দোয়া সবার আগে গ্রহণ করে। এই হত্যার বিচার না করায় সরকার এবং প্রশাসনকে আমিরা ধিক্কার জানাই। মাদরাসা ছাত্র রেজাউল করিমের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতে হবে।

বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং দেশিয় বোধ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশে অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আজকে বাংলাদেশের অবস্থা কী? একদিকে উন্নয়নের গান আর অন্য দিকে মাজলুমের কান্না। এইভাবে দেশ চালানো যায় না। এই দুইয়ের মাঝে সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। আর প্রতিবার নির্বাচনের আগে অনেকেই অনেক কথা বলেন। যে দেশের এই করে দিবে সেই করে দেবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর কেউই এই প্রতিশ্রুতি পালন করে না।

প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, শেখ হাসিনা যদি আবার ক্ষমতায় থাকে তাহলে আর দাড়ি টুপি নিয়ে দেশে থাকা যাবে না। আমরা যারা ইসলামপন্থী বা বিরোধী দলে আছি তারা সবাই চাই দেশে একটি সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ নির্বাচন হোক। আর এই পরিবেশ তৈরি করতে হলে এই জালেম স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা ছাড়া সম্ভব না। তাই আগামীতে নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে কঠিনভাবে পাহারা দিতে হবে। যাতে কেউ ভোট চুরি করতে না পারে। তাই আমাদের একটাই দাবি জাতীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে গুলিস্তানে মাদরাসা ছাত্র হাফেজ রেজাউল করিম নিহতের ঘটনায় ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আগামী ৪ আগস্ট সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করা হলো। আগামী ৫ আগস্ট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরে পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।