ঢাকা: 'শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজবন্দিদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি'র প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদের একাংশ (ড. রেজা কিবরিয়া)।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করার সময় হঠাৎ বৃষ্টি নামলে মঞ্চে থাকা নেতারা সমাবেশের ব্যানার মাথায় নিয়েই বক্তব্য দিতে থাকেন।
এদিন বিকেল ৪টায় গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত এ সমাবেশ শুরুর পর থেকেই আকাশে মেঘ জমতে থাকে। একে একে মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এক সময় সমাবেশ স্থলে থাকা শ্রোতাদের চেয়ার অনেকটাই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে মঞ্চে থাকা নেতারা সমাবেশের ব্যানার মাথার ওপর দিয়ে বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শ্রোতার আসনে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা চেয়ার ছেড়ে আশপাশের মার্কেট ও দোকানের নিচে আশ্রয় নেন। এভাবেই বিভিন্ন নেতার বক্তব্য শেষে গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সূর্য উদিত হবে। এ ২০-২৫ দিন রাজনীতির মাঠে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুদ্বপূর্ণ সময়। অনেকে বলে ২০-২৫ দিনে কি করবেন? আমি বলতে চাই ২০-২৫ দিনে কি হবে, সেটি দেখতে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, একা হয়ে গেছেন। কয়েকদিন আগে ভারতের নয়াদিল্লীতে জি২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ভাগ্যক্রমে সেখানে দাওয়াত পেয়েছিলেন আমাদের বাংলাদেশের ভোটচোর প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে ভারত সরকারের মাধ্যমে চেষ্টা চালালেন যদি কোনোভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো ভোট চোর, ভোটাধিকার হরণকারী, গণতন্ত্র লুন্ঠনকারীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বসে না।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছিলেন, ২০ ঘণ্টা জার্নি করে আটলান্টিক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমি আমেরিকা যেতে চাই না। আমার যাওয়ার মতো বহু মহাদেশ রয়েছে। সেই তিনি নাকে খত দিয়ে আমেরিকা গেছেন। সেখানকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, মার্কিন সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো বৈঠক করবে না। ইউরোপ আমেরিকার পরিষ্কার ঘোষণা, কোনো ভোট চোর, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী সরকার প্রধানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক হতে পারে না।
গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা আরও বলেন, আগামীর নির্বাচন অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ বাংলার মাটিতে আগামীতে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আজকে গণঅধিকার পরিষদ, বিএনপিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল একযোগে একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। প্রত্যেকের একটাই দাবি, একটাই স্লোগান শেখ হাসিনার পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামীর জাতীয় নির্বাচন।
তিনি বলেন, এ সরকার আবারো স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি ভুয়া নির্বাচন করার। এ নির্বাচন করার জন্য এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দালাল জাতীয় পার্টিকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে, যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করছে কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে, তাদের ডিনার পার্টিতে আহ্বান জানানোর জন্য, আসন অফার করার জন্য। এদের নিয়ে তারা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করছে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের এসব অপচিন্তা এদেশের মানুষ বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। তাই ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, শেখ হাসিনার পতন আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা গণঅধিকার পরিষদের একজন নেতাকর্মী ঘরে ফিরবে না।
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক জিসান মহসিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ইমাম উদ্দিনের সঞ্চালণায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পাঠান আজহার, যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, সহকারী সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার, যুগ্ম সদস্য সচিব আতাউল্লাহ, সহকারী আহ্বায়ক শেখ খাইরুল কবির, সদস্য জাকির হোসেন ও সুমন হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
এসসি/জেএইচ