ঢাকা: কৃষক-মজুরদের অধিকার আদায়, সংকট নিরসন ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিতের ৯ দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘কৃষক খেতমজুর গণমঞ্চ’।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে কৃষক-মজুরদের ৬টি সংগঠনের এ রাজনৈতিক জোটের।
‘কৃষক খেতমজুর গণমঞ্চে’র অন্তর্ভুক্ত ৬টি সংগঠন হলো- বিপ্লবী কৃষক সংহতি, বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতি, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, নাগরিক কৃষক ঐক্য ও ভাসানী কৃষক পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কৃষক খেতমজুর গণমঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির সভাপতি দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু বলেন, খেতমজুরদের এখনও সারাবছর কাজের ব্যবস্থা নেই। সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পগুলোর বিশেষ কোনো কার্যকারিতা নেই। ভূমিহীনেরা এখনও খাসজমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। গ্রামের গরিবদের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্যের বাজারের ওপর তো কৃষকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, এমনকি রাষ্ট্রেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং সরকার যেন বাজারের সময় বন্দোবস্তু সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য তো পাচ্ছেনই না, এমনকি ন্যুনতম উৎপাদন খরচটুকুও বাজার থেকে তুলে আনাটা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আধুনীকিকরণের অভাব, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির কারণে চিনিকলগুলো লাভজনক না হয়ে হয়েছে ক্ষতির বোঝা। ফলে অপূরণীয় অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এদেশের আখচাষিরা। একইসঙ্গে কৃষিতে কর্পোরেট পুঁজির আগ্রাসন, মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেটের ফলে এদেশের কৃষি ও কৃষক অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংকটের মুখোমুখি।
কৃষক খেতমজুর গণমঞ্চের ৯ দফা দাবি হলো-
১. ফসলের লাভজনক দাম দিতে হবে। কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয়কেন্দ্র বসিয়ে প্রকৃত চাষির কাছ থেকে নির্ধারিত উপযুক্ত মূল্যে ফসল কিনতে হবে।
২. কৃষিবান্ধব কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় নিম্নতম মজুরি ও জীবনযাত্রা বিবেচনায় নিয়ে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
৩. কৃষকদের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দুর্নীতিমুক্ত ও দলীয়করণমুক্ত কৃষিকার্ড দিতে হবে। জামানতবিহীন ও সুদমুক্ত কৃষিঋণ দিতে হবে। উন্নয়ন ও নগরায়নের নামে যথেচ্ছভাবে আবাদি কৃষি জমি নষ্ট করা যাবে না।
৪. কৃষিঋণ নিয়ে ব্যাংক ও এনজিওদের জালিয়াতি-বিমাদাবি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের জন্য সার্টিফিকেট মামলা, চেকের মামলা, গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে।
৫. আখের দাম মণ প্রতি ৩০০ টাকা, পাটের দাম মণ প্রতি ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বন্ধ করা পাটকল ও চিনিকল আধুনিকায়নের মাধ্যমে সরকারিভাবে চালু করতে হবে। আখচাষি ইউনিয়নের ১৯ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. জাতীয় কমিশন গঠন করে আমূল ভূমিসংস্কার করতে হবে। দখলকৃত খাসজমি উদ্ধার করতে হবে; সমবায়ের ভিত্তিতে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
৭. নদী-হাওড়-বিল-খালের ইজারা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। প্রকৃত মৎসজীবী ও ভূমিহীনদের মধ্যে সমবায়ের ভিত্তিতে খাসজমি বন্দোবস্ত দিতে হবে।
৮. খেতমজুর ও গ্রামীণ মজুরদের সারাবছর কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের জন্য ১৫০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করতে হবে। গ্রামের গরিবদের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো দলীয়করণ, ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে । এসব প্রকল্পে গণতদারকি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গরিবদের জন্য গ্রামীণ রেশনিং ব্যবস্থা ও বয়স্কদের জন্য পেনশন চালু করতে হবে।
৯. কতৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিদায় করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতামূলক, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী কৃষক সংহতির সভাপতি আনছার আলী দুলাল, বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি এ কে এম মিজানুর রশিদ চৌধুরী, নাগরিক কৃষক ঐক্যের সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম ও ভাসানী কৃষক পরিষদের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
জেডএ/জেএইচ