ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মজুরি ও ভোটাধিকারের আন্দোলন এক সুতোয় গাঁথার আহ্বান সাকির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
মজুরি ও ভোটাধিকারের আন্দোলন এক সুতোয় গাঁথার আহ্বান সাকির

ঢাকা: শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন এবং ভোটাধিকারের আন্দোলনকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক আবহাওয়ায় শ্রমিকদের বিপদগ্রস্ত না করে অবিলম্বে ২৫ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে এই আহ্বান জানান তিনি।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

সমাবেশে শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকার মজুরির আন্দোলন আর ভোটাধিকারের আন্দোলনকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলার আহ্বান জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী দিনে ভোট আদায় হলে আপনাদের (শ্রমিক) যথাযথ মজুরি আদায় হবে, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার হবে। এবং কেবল পাঁচ বছর পর নয়, প্রতিবছর এমন ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে, যেন বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে তিন বছরের মাথায় মজুরি সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম আইন বদলাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার পাঁচ বছরের সাড়ে চার বছরের মাথায় এসে একটি মজুরি কমিশন গঠন করেছে। সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে ত্রি-পক্ষীয় কমিশন। আমরা সব সময় দেখি শ্রমিকদের প্রতিনিধি কীভাবে নির্বাচন করা হয়। শ্রমিকদের প্রতিনিধি যখন নির্বাচিত হন, তখন সেটা কতটা শ্রমিকদের প্রতিনিধি থাকেন আর সরকারি দলে আওতার মধ্যে লোকেরা থাকেন সেটা আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জানি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আরx বলেন, সবাই জানেন বাজারের কি অবস্থা। করোনা এবং বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেশে যতটা না যৌক্তিকভাবে দাম বাড়ার কথা, তার থেকে বেশি দাম বাড়তে থাকল। এ দেশে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। কিন্তু দেশে একটি সরকার আছে। যারা এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সরকারকে যখন বলা হয়, আপনারা কেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন না, তখন সরকার বলে, সিন্ডিকেটকে নাকি ধরা যাবে না। সিন্ডিকেটকে ধরলে নাকি আরো দাম বেড়ে যাবে। এভাবে বাজারে যে যার খেয়াল খুশি মতো দাম বাড়ানো হলো।

তিনি আরো বলেন, দেশে একটি নির্লজ্জ সরকার আছে। যারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রতিদিন গলাবাজি করছে, তারা নাকি গণতান্ত্রিক। তারা নাকি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তলে তলে নাকি আপস হয়ে গেছে। পিটার হাসের মুরুব্বিদের সঙ্গে নাকি কথা হয়ে গেছে। আর বিরোধী দলকে বলেন, তারা নাকি বিদেশে দৌড়াদৌড়ি করছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা আরো বলেন, আজকে এই সরকারের মুখে গণতন্ত্র, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদের ঝণ্ডা আর বাস্তবে বিদেশিদের পায়ে ধরে আর হুমকি দেয়, বিরোধী দল আন্দোলন করলে নাকি শাপলা চত্বরের পরিণতি হবে। শাপলা চত্বরে কত ভয়াবহ অত্যাচার করেছেন, হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন সেটি এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। এখন আপনারা (সরকার) ভাবছেন, এমন কাজ করবেন।

তিনি আরো বলেন, এমন একটি সরকার যখন ক্ষমতায় আছে, যার কোনো জবাবদিহিতা নেই। যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে ভোটের অধিকার দিয়েছি। যারা লুটপাট করে, সিন্ডিকেট লালন পালন করে মিথ্যা কথা বলে, তারা নাকি মানুষের মুখে ভাত দিয়েছে। মালিকপক্ষ যখন তখন ছাঁটাই করে, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দেয় না, রাস্তায় নামলে পুলিশ, গুন্ডা বাহিনী দিয়ে হামলা করে, তারপর বলে তারা (সরকার) নাকি শ্রমিকের অধিকার দিয়েছে। এমন মিথ্যাবাদী, প্রতারক সরকার ক্ষমতায় আছে বলে, আজকে মালিকপক্ষ এই বাজারে মাত্র ৪০০ টাকা বাড়িয়ে মজুরি প্রস্তাব করতে পারে। দেশে যদি গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার থাকতো, তাহলে মালিকপক্ষ এভাবে মজুরি প্রস্তাব করার সাহসই করতো না। দেশে যদি ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থাকতো, তাহলে মজুরি নিয়ে এই টালবাহানা আজকে পর্যন্ত মালিক ও সরকার পক্ষ করতে পারতো না।

শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা মজুরির সংগ্রামকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, চট্টগ্রাম সমস্ত এলাকার শ্রমিকদের রাজপথে নামতে হবে। মনে রাখবেন, শ্রমিকরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, কোনো পুলিশ বাহিনী, কোনো গুন্ডা বাহিনী আপনাদের দমাতে পারবে না। ভয় ভেঙে রাজপথে নেমে আসুন।

তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে যারাই সরকারে আসবে, তাদের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের দাবি না মেনে, অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না। সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি গড়ে তুলুন, সংগঠন গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, ঐক্যবদ্ধ না হলে, কোনো অধিকার আদায় হবে না। রাজপথ দখল নিন, আপনারাই (শ্রমিক) বাংলাদেশে রাজত্ব করবেন।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, আপনারা দেখেছেন, গত ২২ তারিখে শ্রমিকদের সব আশা-প্রত্যাশাকে ভূলুণ্ঠিত করে কীভাবে মালিকপক্ষ মাত্র ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব করেছে। আপনারা সবাই জানেন আজকে বাজারে কি অবস্থা। শ্রমিকরা যখন কারখানা থেকে বাসায় ফেরে তাদের পক্ষে ডিম, মাছ, মাংস কেনা সম্ভব হয় না। শ্রমিকরা যখন বাড়ি ফেরে তখন তাদের হাতে থাকে শাক-সবজি। শ্রমিকদের কোনো পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। যখন শ্রমিকরা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তখন ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব শ্রমিকদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই না। আমরা এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করছি। এটি মালিকদের স্বার্থের প্রস্তাব।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলিফ দেওয়ান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা অঞ্জন দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা মো. শামীম মিয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।