ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এদিকে অবরোধ চলমান থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের চাপও বেড়েছে।
অবরোধ উপেক্ষা করে নগরীর উত্তরা এলাকার কর্মজীবী মানুষেরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে শুরু করেছেন।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর হয়ে সড়কে চলছে যানবাহন। সড়কে চলছে গণপরিবহন, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল। পাশাপাশি এই এলাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা ও অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকেও স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধ শুরুর আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী- ১১ নভেম্বর শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা (অবরোধের আগের রাত) পর্যন্ত মোট ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা সিটিতে ৭টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ১টি, বরিশাল বিভাগ(বরিশাল সদর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৮টি বাস, ১টি পিকআপ পুড়ে যায়। এ অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ১৯টি ইউনিট ও ১৯৩ জন জনবল কাজ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং আজমপুর, জসিমউদদীন ও বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন অলিগলিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের লোকজন অবস্থান নিয়েছে। যাতে এই এলাকায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। সড়কে যাতে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারে।
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং, আজমপুর, বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের চাপ থাকতে দেখা গেছে। সড়কে যাত্রীদের সংখ্যাও বেড়েছে।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা ফারহান সাদিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধ দিয়েছে, কিন্তু এই অবরোধে সাধারণ মানুষের জীবন নাজেহাল। আমাদের কাজ করে খেতে হয়। অফিসে না গেলে সেলারি কাটবে। আর অবরোধে যে বাসে উঠবো সেটাও ভয় লাগে। কারণ বাসে আগুন দিয়ে যাচ্ছে অবরোধ সমর্থনকারীরা।
কিন্তু দিন শেষে আমাদের সংসারের খরচ যোগাতে হয়। এসব অবরোধ পাত্তা দিলে সংসার চলবে না-যোগ করেন তিনি।
গাজীপুর পরিবহনের চালক শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার। এই দিন যাত্রীর অনেক চাপ থাকে। কিন্তু অবরোধের কারণে যাত্রী খুব বেশি নাই। আমাদেরও পেট চালাইতে হয়। অবরোধে গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের লস। আবার ভয় লাগে, যদি গাড়িতে আগুন দেয় তবে আরও বিপদ। এই ঝুঁকিতেও গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কারণ একদিন বসে থাকলে কেউ তো আমাকে খাওয়াবে না।
অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে রাজধানীতে যাতে কোনো নাশকতা না ঘটে সেজন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো রাজধানীতে র্যাব-পুলিশের টহল রয়েছে। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাজধানীতে টহল দিচ্ছে র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য। এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরাও টহলে রয়েছেন। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুনসহ সারাদেশে ১৫২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এদিকে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র্যাব ফোর্সেস নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে দেড় শতাধিকসহ দেশব্যাপী র্যাব ফোর্সেস এর ১৫টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৪শ টহল দল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি কোন ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এসজেএ/এমএম