ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারে না

ঢাকা: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারে না। কেউ যদি শর্ত দিয়ে সংলাপে বসতে চায় তাহলে সেটা ঠিক হবে না।

শর্ত ছাড়া সংলাপে বসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ইসলামিক জোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে লিবারেল ইসলামিক জোটের উদ্যোগে বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।

সৈয়দ সাইফুদ্দীন বলেন, সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাইলে আমাদের সুস্থ চিন্তা করতে হবে। সবাই মিলে ঠিক করতে হবে কি করলে এ সমস্যার সমাধাb করা যায়। আগামী নির্বাচনের সংকট দুর করতে আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসে কথা বলার জন্য প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ একটা বিশেষ সময় পার করছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারে না। আর এভাবে যদি সহিংসতা চলতে থাকে তাহলে পৃথিবীতে অরাজকতা দিন দিন বারতে থাকবে। তাই আমাদের সমস্যাগুলো আমাদেরই সমাধান করতে হবে। এখানে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ থাকতে পারে কিন্তু সমস্যা আমাদেরই করতে হবে।

বিরোধী দলগুলো যারা অবরোধ করছে তাদের কারণে বাজার সিন্ডিকেটরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে এই অবরোধ কি জনগণের পক্ষে গেল? তাই মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নাগালের মধ্যে আনতে হলে এই ধরনের কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জনগণের পক্ষে থেকে কাজ করতে হবে।

ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, গত ২৮ তারিখের ঘটনায় বিনা তদন্তে সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিরপরাধ রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে। এবং সরকারকেই একটি সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে।

ছোট দলগুলো যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগে কিছু নির্বাচনী সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আটক অবস্থায় আছে। তাদের সাথে সংলাপ করতে হলে ভার্চুয়ালি করতে হবে। যা সম্ভব নয় আক্ষরিক অর্থে। পাশাপাশি আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সকল নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ করতে হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তবে তাদের ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগে কিছু সংস্কার করতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর আমাদের যে নির্বাচন হয় তার সংস্কার করতে হবে। যার মাধ্যমে ছোট ছোট দলগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আসতে পারবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বলেন, সহিংসতা এবং বিভক্তি দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তাই আমরা ইসলামী দলগুলো একটি জোট তৈরি করতে চেয়েছি। যাতে করে দেশের মানুষের সংকটগুলো আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায়।

তিনি বলেন, পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে যাব। তবে ১৪ এবং ১৮ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আমরা এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চাই না। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে ভোট প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বাস করি না। তবে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হওয়ায় বিশ্বাস করি। তবে নির্বাচন কমিশন হতে হবে মেরুদণ্ডওয়ালা লোক। এই মেরুদণ্ডওয়ালা লোক সার্চ কমিটির মাধ্যমে খুঁজে বের করার দরকার ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

তিনি বলেন, উন্নত দেশে বড় দলগুলো ছোট দলগুলোর কথা শুনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তবে আমাদের দেশে জোট করে বড় দলগুলো দানব হয়ে ওঠে, তারা তখন কারও কথা শুনতে চায় না। একক ক্ষমতা কারও হাতে থাকলে সে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে। তাই আমরা বলেছিল ক্ষমতা সমান ভাগে ভাগ করার কথা বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতারও ভারসাম্য থাকতে হবে। বিএনপির সমর্থন অনেক, তাদের কথায় অনেক লোক রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু কর্মসূচি ভুল দেওয়ার কারণে তারা আন্দোলনে এই লোক সমাগমকে কাজে লাগাতে পারেনি। বিএনপির পেছনে একটা বড় কালো হাত আছে, তারা তাদের সামনে এগোতে দিতে চাচ্ছে না।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য লিবারেল ইসলামী জোটের ৩০০ প্রার্থী প্রস্তুত আছে জানিয়ে লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, খালি মাঠে আমরা গোল দিতে চাই না। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা কেয়ারটেকার পদ্ধতি সমর্থন করি না। কিন্তু এককভাবে ক্ষমতায় থাকাও বিশ্বাস করি না। নৌকার নির্বাচনী মার্কা পেলেই পাশ, এই মনোভাবে থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব হলো সবাইকে ডেকে এক করে বুঝিয়ে বলা। কারণ, তিনিই চাইলে আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে ভাল করে বোঝাতে পারবেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান।

অতিদ্রুত বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিয়ে, সংলাপের ব্যবস্থা করার আহবান জানিয়ে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর আরও বলেন, ২৮ তারিখের ঘটনায় বিনা তদন্তে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি। কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ এগুলো করেছে, আর তাদের কারণেই সরকারকে বিপদে পড়তে হয়। তাই অতিদ্রুত বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিয়ে, সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে।

বর্তমান সংকট থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সকলে মিলে বসে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক পার্টির চেয়ারম্যান ফারাহনাজ হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করতে হবে। আর আলোচনা প্রতি সপ্তাহেই হতে হবে। ঘর থেকে বের হতে গেলে সবাই চিন্তা করে সে ঠিকমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা। তাই এই আতঙ্কে দেশের কোন মানুষ থাকতে চায় না। তাই আগামী নির্বাচন যাতে সুন্দর হয় সে দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

দেশে দুটি রাজনৈতিক দলের একটি আপদ অন্যটি বিপদ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জনদল (বিজেডি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী বলেন, প্রকৃত অর্থে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এই সংকটগুলো কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা মনে করি একটি দেশে দুটি রাজনৈতিক দলের একটি আপদ অন্যটি বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে চাইলে যে লক্ষ্য থাকার কথা ছিল তা ৫২ বছরেও এদেশে হয়ে ওঠেনি। আমরা লগি বৈঠা থেকে জ্বালাও পোড়াও সবই দেখেছি। তাই বলতে চাই, আসুন আমরা সকলে মিলে এই আপদ বিপদকে নিরসন করি। যার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর দেশ বাস্তবায়ন করতে পারব।

গোলটেবিল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন লিবারেল ইসলামিক জোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলম নুরী আল সুরেশ্বরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান হাসরত খান ভাসানী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক আকন্দ,  মাওলানা রুহুল আমিন ভুঁইয়া, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সরকার, বাংলাদেশ জনদল (বিজডি)র ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, কৃষক শ্রমিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সেলিম চৌধুরী, বিজেডি মহাসচিব সেলিম, আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মাওলানা হানিফ নুরী, আহমদ, অ্যাডভোকেট শাহআলম অভি, মুফতি বোরহান উদ্দীন আজিজী, শায়খ আজমাইন আসরার, বিএসপি যুগ্ম মহাসচিব মো. আসলাম হোসাইন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।