সিলেট: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেন এক ভাগ্য পরীক্ষার খেলায় অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৃণমূলের নেতারাও দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
নৌকায় চড়ে আইন প্রণেতা বা সংসদ সদস্য (এমপি) হতে চান বর্তমান ও সাবেক পৌর মেয়র, জেলা পরিষদ প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা প্রশাসক, ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরাও।
ইতোমধ্যে সিলেটের ১৯টি সংসদীয় আসনের বেশ কয়েকটিতে তৃণমূলের ২৫ জনপ্রতিনিধি সংসদে যেতে চান। তাদের সবাই নৌকায় উঠতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন।
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের তিন ইউপি চেয়ারম্যান, চার জেলার সাবেক ও বর্তমান ১৪ উপজেলা চেয়ারম্যান, তিন ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সাবেক এক প্রশাসকসহ দুই চেয়ারম্যান, সাবেক ও বর্তমান দুই পৌর মেয়র দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন আসন থেকে নৌকা চেয়েছেন।
এবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৯টি আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন ১৭২ মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সিলেট-১ (সিলেট সিটি এলাকা ও সদর উপজেলা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে আট মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটজন।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে চ্যালেঞ্জ করে নৌকার টিকিট পেতে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দুটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। এ ছাড়া আরও ১০ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে বিভাগের মধ্যে সর্বাধিক ১৭ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা দীপা মনোনয়ন চেয়েছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনও দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস, দিরাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এ আসনের প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী জয়া সেন গুপ্তা। দলের আরও আটজন মনোনয়ন চান। এর বাইরেও বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা) আসনে সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ছাড়াও আরও তিনজন নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে ১০ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। এর মধ্যে দুই সহোদর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট ও তার সহোদর জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল নৌকা চেয়েছেন। জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন ছাড়াও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তার সঙ্গে দলের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও তিনজন দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এ আসনে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুল ইসলামসহ নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পাঁচজন।
মৌলভীবাজার-৩ (রাজনগর-সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নেছার আহমদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলাউর রহমান টিপুসহ মোট আটজন আছেন দলের মনোনয়ন দৌড়ে।
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদসহ সাতজন দলের মনোনয়ন চেয়েছেন।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ গাজী (মিলাদ গাজী)। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীসহ আটজন দলের মনোনয়ন চেয়েছেন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমীরিগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, আজমীরিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসানসহ নয়জন নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম জমা নিয়েছেন।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। তার সঙ্গে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুমসহ চারজন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলীসহ ১০ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীমও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। তাই যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন। নিশ্চয় তাদের যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়ন কিনেছেন। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, আমার বাগানে অনেক ফুল, সবচেয়ে ভালো ফুলটি আমি বেছে নেব। তাই যাচাই-বাছাইক্রমে তিনি যাদের মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
এনইউ/আরএইচ