ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজশাহীর ছয় আসনের ৪টিতেই বড় পরিবর্তন, বিতর্কিতরা বাদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
রাজশাহীর ছয় আসনের ৪টিতেই বড় পরিবর্তন, বিতর্কিতরা বাদ

রাজশাহী: রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতেই এবার বড় পরিবর্তন এনেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবার।

যে কারণে বাদ পড়েছেন বিতর্কিতরা। মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়েছেন বর্তমান এমপিরা।

তাই চারটিতেই এসেছেন নতুন মুখ। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।  

তবে নতুন যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকায় মিষ্টি বিতরণও হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দল থেকে চূড়ান্ত করা প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর রাজশাহীর এসব এলাকায় খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিলও করেছেন কর্মী-সমর্থকরা।

আর রাজশাহীর দুটি সংসদীয় আসনে এবারই প্রথমবারের মতো নতুন দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। যারা অতীতে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেননি।  

এর মধ্যে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।  

এই আসনে বাদ পড়েছেন বহুল আলোচিত ও হেভিওয়েট প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক।  

প্রার্থী বদল করা হয়েছে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনও। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

অন্যদিকে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর মনোনয়ন বহাল থাকায় দলের তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।  

রাজশাহী-৩ ( পবা-মোহনপুর) আসনে এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। রাজশাহী-২ (মহানগর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু হলে রাজশাহীর ছয়টি আসনে মোট ৪৭ জন দলের মনোনয়ন কিনে জমা দেন। সেই থেকে মনোনয়ন ঘোষণার দিকে নজর রাখছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা।  
রোববার বিকেলে মনোনয়ন ঘোষণার পর রাজশাহীর বিভিন্ন আসনের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ দলীয় মনোনয়নে যেমন নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন তেমনি কেউ কেউ মনোনীত প্রার্থীদের স্বাগত জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশও করেছেন।  

এবার রাজশাহী-১ আসনে প্রার্থী বদলের জোর আশা করছিলেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। তবে শেষ পর্যন্ত গত তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকেই ফের মনোনয়ন দিয়েছে দল। ওমর ফারুকের আসনে ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের অনেকেই নিজ নিজ মনোনয়নের বিষয়ে নিশ্চিত বলে অগ্রিম প্রচার চালিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছিলেন।

রাজশাহী-২ (মহানগর) আসনটিতে গত তিনটি নির্বাচনে কাউকেও মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।  

এবার এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালকে তবে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হলে তার মনোনয়ন না থাকতেও পারে। তাই রাজশাহী সদরের এই গুরুত্বপূর্ণ আসনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

এদিকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে গত দু’বারের এমপি আয়েন উদ্দিনকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আয়েন উদ্দিনের বাবা শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে।  

তার বিপরীতে আসাদুজ্জামান তৃণমূলে একজন জনপ্রিয় প্রার্থী ও দলের রাজনীতিতে তার দীর্ঘ ত্যাগ রয়েছে। তবে আসাদ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নন। তাই অতিথি আসন হিসেবে পরিচিত এই আসনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তবে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়া রাজশাহী-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন হতাশা প্রকাশ করেছেন। সাংগঠনিকভাবে তার কোনো ত্রুটি ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, বাদ পড়ার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। তবে কিছু করার নেই। মানুষই তা মূল্যায়ন করবে।

শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বহুল আলোচিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকও। তার চেয়ে অনেক কম প্রভাবশালী প্রার্থী ছিলেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এবার প্রথমবারের মতো এই আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাকে।

তাই এনামুলের অনুসারীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার খবরে অনকটাই মুষড়ে পড়েছেন। এই নিয়ে  কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন এখন।

রাজশাহী-৫ ( পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বাদ পড়েছেন ডা. মনসুর রহমান। তার বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের সাবেক এমপি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলে দারাকে বাদ দিয়ে ডা. মনসুরকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়লেন ডা. মনসুর রহমান। তবে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

যদিও এই আসনে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, দলের প্রতি ত্যাগের কারণেই নেত্রী তাকে মনোনীত করেছেন। গেলবার মনোনয়ন না পেলেও তিনি দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে গেছেন। দলকে সুসংগঠিত করেছেন। সবাই তা জানে।

এছাড়া রাজশাহী-৬ ( চারঘাট-বাঘা) আসনে হ্যাট্রিক করার পর আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এই আসনে মোট ছয় জন নেতা মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে নেতাকর্মীরা মনোনয়ন বদলের ব্যাপারে তেমন প্রত্যাশা ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
এসএস/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।