ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত হওয়ার পরও বিএনপিকে নিয়ে তিনি নেতিবাচক নন।
ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্রকরে গত ২৮ অক্টোবর যে নাশকতার অভিযোগ দলটির ওপর দেওয়া হয়েছে তা ঠিক নয়। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশটা ছিল সম্পূর্ণ শান্তি প্রিয়। সেখানে তো আমরা ছিলাম। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে এ ধরনের অপবাদ যায় না।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে কাওরানবাজারের ইউটিসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন শাহজাহান ওমর।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির ওপর নাশকতার যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ফেলে আসা দল নিয়ে মন্তব্যটি করেন শাহজাহান ওমর। তিনি আরও বলেন, ২৮ অক্টোবর কারা ইট মারল, কি করল- আমরা তো কিছু জানি না। এটা সম্পূর্ণ একটা থার্ড পার্টি করেছে। তবে তারা এই কাজটা ভালো করেনি। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে এ ধরনের অপবাদ যায় না। বিএনপি সবসময় শান্তিপ্রিয় আন্দোলন করেছে।
সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে বিএনপি টানা হরতাল-অবরোধ দিয়ে যাচ্ছে, সামনেও অবরোধের ঘোষণা করেছে। এই ধরনের আন্দোলনকে আপনি কীভাবে দেখেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল করাটা ঠিক আছে। এই হরতাল পর্যন্ত সংবিধানে এলাও করে। তবে জ্বালাও-পোড়াও, বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন এটা কোনো ধরনের রাজনীতি? দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করেছি। কিন্তু বিএনপি তো নির্বাচনে যাচ্ছে না। আমরা তো নির্বাচন করি দেশ ও জনগণের খেদমত করার জন্য। যেহেতু আমি দেশের জনগণের খেদমত করতে পারছি না। তাই ভাবলাম নির্বাচন তো করতে হয়। যেহেতু নির্বাচন করব তাই কোনো ঠুনকো পার্টিতে তো যাওয়া চলে না। যেহেতু নির্বাচনে যাবো, তাই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে যাওয়াই ভালো হবে।
বিএনপি কেন ছাড়লেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, বিএনপি ১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করলো। ২০১৮ সালে তারা জগাখিচুড়ির একটা নির্বাচন করলো। পরবর্তীতে সেই নির্বাচন আর করলো না। এবারও তারা নির্বাচন করবে না। । কিন্তু আমার এলাকার লোকজনের আমার প্রতি কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। তাদেরকে আমি অনেকদিন আশ্বাস দিয়ে রেখেছি, সুযোগ পেলে আমি অবশ্যই তাদের জন্য কাজ করব। তাই তাদের স্বার্থে আমি নির্বাচনে গিয়ে কিছু কাজ করতে চাই।
দীর্ঘ ৪৫ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর কোনো চাপ অনুভব করে কি আপনি দল ছাড়লেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শাহজাহান ওমর বলেন, না আমার কোনো চাপ নেই। আমি বিএনপি ছেড়েছি এটা গণমাধ্যমের সাহায্যে দেশবাসীকে জানালাম। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য। আমি বিএনপি থেকে অবসর গ্রহণ করেছি ২২ সালের জুন মাসে। আমি রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য ইতোমধ্যে (২০২২ সালের ২০ জুন) মহাসচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে। তারপরও তারা আমাকে ধরে রেখেছে, আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাকে পছন্দ করতেন, তিনি আমাকে ডেকে এনে ৩১ বছর বয়সে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন। আমি কৃতজ্ঞতার বসে এতদিন বিএনপির সার্ভিস করেছি।
কীভাবে নৌকার প্রতীক পেলেন জানতে চাইলে বিএনপির বহিষ্কৃত এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সকালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকেছেন। তারপর আমি পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। এত বড় মাপের একজন নেত্রী আমাকে ডেকেছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলো কি বললেন শোনো। তারপর আমি সেখানে গিয়েছি। আমাকে বললেন, ভাই নির্বাচন করেন। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করল কীভাবে করবেন নির্বাচন। আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে ভাই ডাকছেন, তো আপনার মার্কাতেই নির্বাচন করব। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ, এতটুকুই।
শোনা যাচ্ছে আপনি চাপের মুখে জামিন পেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করছেন, সেটা কতটা সত্য? বিএনপি ছেড়ে আসা এ নেতা বলেন, আমার আগে তিনজন ল’ইয়ার একই মামলায় জামিন পেয়েছেন। মাহাবুব উদ্দিন খোকন, জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরীরা আইনজীবী হিসেবে তারা আগাম জামিন চেয়েছিল। তারা ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির হয়ে জামিন পেয়েছে তিন সপ্তাহের জন্য। আমি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বীর উত্তম হিসেবে জামিন পেয়েছি। আবার জামিন শুনানি করেছে বিএনপির সমর্থক বিচারক মাসুদ তালুকদার। আমি সেভাবে জামিনে বেরিয়ে এসেছি।
বিএনপি করা নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা প্রেসক্লাবের সামনে যে মানববন্ধন করেন সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেছিলেন, কারাগারে আপনার ও পরিবারের ওপর সরকার চাপ সৃষ্টি করছে- শাহজাহান ওমর বলেন, তিনি (সেলিমা রহমান) যে চাপের কথা বলছেন, সেটা যারা মানববন্ধনে গিয়েছিল সে সকল পরিবারের কথা বলছেন। আমার ব্যাপারে কোনো চাপ নেই। আমাকে চাপ দেয় কে? আমি তো সেখানে (জেলখানায়) ভালোই ছিলাম। পাশাপাশি আমার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির মামলা ছিল সেখানেও আমি খালাস প্রাপ্ত।
৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করার পর একদল থেকে অন্য দলে চলে যাওয়াটা বিষয়টাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- প্রশ্ন করা হলে শাহজাহান ওমর বলেন, হুট করে দলত্যাগ করে কেন হবে? আমি তো ২০২২ সালেই দলত্যাগ করেছি। তবে বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাকে রিকোয়েস্ট করেছে বিধায় আমি গিয়েছি। আমি তো সেখানে কোনো ধরনের বক্তৃতা করিনি।
ওমরের সংবাদ সম্মেলনের আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী জানান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে অবহিত করা হলো।
জানা গেছে, জামিনে কারাগার থেকে বেরোনোর পরদিন আওয়ামী লীগে যোগ দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও পেয়েছেন তিনি। তাকে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, তাকে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি বাসা থেকে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। এরপর ৯ নভেম্বর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে জামিন পান শাহজাহান ওমর। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৩
ইএসএস/এমজে