সিলেট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ।
এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি মনোনীত সাবেক বিরোধী দলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিনসহ ছয়জন।
আসনটিতে শমসের মুবিনের প্রার্থী হওয়া ও ভাগাভাগিতে নুরুল ইসলাম নাহিদের বাদ পড়ার গুঞ্জনে আলোচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তলে তলে এবার নাহিদকে ছেড়ে সরওয়ারের সঙ্গী হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন জানালেন, দীর্ঘ উন্নয়ন-বঞ্চনার শিকার সিলেট-৬ আসনের মানুষ কেন তাকে চায়, জনগণের কাছে নিজেকে কীভাবে নিয়ে গেছেন। পাশাপাশি কেন তিনি সংসদে যেতে চান।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট নগরের একটি অভিজাত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে যে, বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও বাংলাদেশকে নিয়ে হিংসা করে। অথচ আমাদের দুটি উপজেলায় (গোলাগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) রাস্তা, সেতু, ব্রিজ কিছুই হয়নি। এ আসনের সংসদ সদস্য মন্ত্রী হয়েছেন। মানুষ নিজেদের ও রাস্তাঘাটের দুর্দশার কথা শোনালে তিনি রাস্তার মন্ত্রী না, বলতেও শুনেছি।
সরওয়ার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই দেখছি শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাকে অনুসরণ করে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। তখনও নির্বাচন করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি ১/১১’র সময় কারা নির্যাতিত হয়েছি। যখন দেখেছি এলাকার দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কেউ কাজ করছেন না, তখন নিজে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সুখে-দুঃখে সব সময় তাদের পাশে থেকেছি। মানুষের পাশে গিয়ে তাদের জন্য মায়া হয়ে গেছে, তাই পরিবারের সদস্যরা কানাডায় প্রতিষ্ঠিত হলেও আমি এলাকার মানুষের কাছে রয়ে গেছি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময়, ভয়াবহ বন্যার সময় যখন কেউ কারো খোঁজ নিচ্ছিল না তখনও আমি এলাকাবাসীর পাশে থেকে তাদের নানাভাবে সহায়তা করেছি।
তিনি বলেন, বিপদের সময় মানুষ আমাকে কাছে পেয়েছে। সহযোগিতার জন্য আমাকে কল করেন। আমি জিজ্ঞেস করি আপনারা জনপ্রতিনিধিকে কল করেন না কেন? তারা উত্তর দেন মন্ত্রীকে কল দিলে গালি দেন, বলেন ‘আমি রাস্তার মন্ত্রী না’।
সরওয়ার হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধি না হয়েও আমি সরকারি বিভিন্ন খাত থেকে ও নিজস্ব অর্থায়নে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। গ্রামীণ রাস্তা, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসার ছোটখাটো উন্নয়ন করেছি, যা অনেক জনপ্রতিনিধিও করতে পারেননি। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গরিব ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোটি কোটি টাকা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের মানুষদের এনে দিয়েছি। এটি আরও বেশি করে করতে চাই। শীতের সময় কম্বল এনে বিতরণ করেছি। কিন্তু এভাবে একটি এলাকার উন্নয়ন সাধিত হয় না। এলাকার মানুষের উন্নয়ন করতে হলে আমাকে ৩০০ জনের একজন হতে হবে। সেই ভাবনা থেকে প্রার্থী হওয়া।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। প্রবাসীরাও আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও বলেছেন, বিদেশে আর কত? দেশে এসো, মানুষের সেবা করো। সে কারণে দলের বাধা না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আশা করি, জনগণ আমার বিগত দিনের কাজের মূল্যায়ন স্বরূপ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
দলের প্রয়োজনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সরওয়ার হোসেন বলেন, আমি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মতামত নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ডামি প্রার্থী হইনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আমিও তা বিশ্বাস করি। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ আছে। নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ভোটাররা ভোট দেবে, তাই নির্বাচিত হলে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল বারী ও সরওয়ার হোসেনের ছোট ভাই শাহেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩
এনইউ/আরবি