ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

যেভাবে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের চার নেতাকে

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
যেভাবে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের চার নেতাকে

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে লোগাং ইউনিয়ন। মূল রাস্তা থেকে নদী পার হয়ে পাহাড়ি পথ ধরে এক কিলোমিটার দূরত্বে অনিলপাড়া।

ঘটনাস্থলের চারপাশে আম বাগান। উচুঁ উচুঁ পাহাড় আর গাছগাছালি বেষ্টিত, মাঝখানে পাহাড়ের উপর একাকী একটি বাড়ি।

স্থানীয় অতুল চন্দ্র চাকমার এই বাড়িতে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘরের ভেতর হাত বাঁধা অবস্থায় সুনীল ত্রিপুরাকে (২৮) গুলি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে তাকে তুলে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গুলি করে। বাড়ির সামনে এবং পেছনে পড়ে আছে গুলির খোসা।

বাড়ির ঠিক পেছনে লিচু গাছের নিচে পড়ে আছে লিটন চাকমার (২৯) মৃতদেহ। আর ঘরের পেছনের রুমে তছনছ করা কাপড় চোপড়ের মাঝে পড়ে আছে বিপুল চাকমা (৩২) এবং রহিন বিকাশ ত্রিপুরা ওরফে রুহিনসার (৪৯) মৃতদেহ।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে অস্ত্রধারীরা তাদের হত্যা করে। একই সাথে হরি কমল ত্রিপুরা, প্রকাশ ত্রিপুরা ও নীতি দত্ত চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহৃত তিনজনই ইউপিডিএফের সদস্য।

দলটির পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে বলা হয়, ‘গতকাল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা (৩২), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ—সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা (২৮), গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা (২৯) ও ইউপিডিএফের সংগঠক রহিন বিকাশ ত্রিপুরা (৪৯), নীতি দত্ত চাকমা ও হরিকমল ত্রিপুরাসহ ৭ জন নেতাকর্মী যুব সম্মেলন সফল করার জন্য লোগাং এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। আজ মঙ্গলবার ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ’

‘ঘটনার সময় রাতে বিপুল চাকমাসহ ওই ৭ জন অনিলপাড়া নামের গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পানছড়ি সদর এলাকা থেকে নব্যমুখোশ (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) দুর্বৃত্তদের একটি সশস্ত্র দল ওই বাড়িতে যায় এবং অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় একে একে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে। ’

ইউপিডিএফের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘চারজনকে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক নীতিদত্ত চাকমা, হরিকমল ত্রিপুরা ও সদস্য প্রকাশ ত্রিপুরাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ’

দুদুকছড়া ইউপিডিএফের সংগঠক সবুধ চাকমা বলেন, আজ আমাদের ছাত্র সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে যোগ দিতে আমাদের নেতাকর্মীরা পানছড়িতে অবস্থান করছিলেন। নব্য মুখোশধারীরা (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) বাড়ি ঘেরাও করে পরিকল্পিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করে চারজনকে হত্যা করে। তারা আমাদের তিন নেতাকে তুলে নিয়ে গেছে।

১ নং লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অনিল কুমার চাকমা বলেন, রাতে ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। স্থানীয় জনমনে ভীতি তৈরি হয়েছে। ঘটনার ১৬ ঘণ্টা পরও মরদেহ উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।

এদিকে পানছড়ি থানা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের ঘটনাস্থল থেকে ঘটনার সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পরে গিয়ে পুলিশ মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে। এমনকি এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের কেউ সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ সুপার কল রিসিভ করেননি। পানছড়ি থানায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও পুলিশ সুপার এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রাও। লোগাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অনিল কুমার চাকমা বলেন, রাতে গোলাগুলির শব্দ নিয়ে পুলিশ একাধিকবার ফোন দিয়ে খবর নিয়েছে। কিন্তু সকাল থেকে বার বার ফোন দিয়েও শেষ পর্যন্ত বিকেলে মরদেহ নিতে এসেছে।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ সমর্থিত সংগঠনগুলো খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় এক ঘণটার মতো শহরের স্বনির্ভর এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন:
পানছড়িতে ইউপিডিএফের ৪ জনকে গুলি করে হত্যা
চারজনকে হত্যা: এক মাস পানছড়ি বাজার বয়কট

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, ডিসেস্বর ১২, ২০২৩
এডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।