বরিশাল: নিজেকে জয় বাংলার লোক দাবি করে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, বরিশালে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যক্তি শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক, তিনি প্রথমে কংগ্রেস করেছেন, তারপর মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলীম লীগ, কেএসপি এবং শেষে যুক্তফ্রন্ট। শের ই বাংলা দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, শিক্ষার স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে এটা করতে পারে তাহলে আমি তো একটা চুনোপুঁটি।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় বরিশাল নগরের কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসভবনে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই সময় দল বদলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘ডোন্ট সে দ্যাট’। এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। সেখানে কোথাও আছে নাকি দল চেঞ্জ করা যাবে না।
তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জু ১৯৭৪ সালে আমাকে কেসে ঢুকিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভুল বুঝিয়ে আমার চাকরি ডিসমিস করেছিল। আমি তখন খুব বিপদগ্রস্ত। জিয়াউর রহমান আর্মিতে আমার শিক্ষক ছিলেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পর আমাকে বললো আমার দল করো। আর তখন আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ছিল না। তবে সেই সময় বিপদে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, আমির হোসেন আমু ও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ আমার জন্য লাফিয়ে পড়েছিল। যার জন্য আমি টিকে আছি, তা না হলে আমার অনেক আগে জেল হয়ে যেতো। আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার বাসায় ডিস্ট্রিক্ট জজকে ডেকে এনে আমার জামিন করিয়েছেন, প্রকাশ্যে বললাম। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ জেলে বার বার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। এগুলো আমি স্মরণ করি।
তিনি আরও বলেন, জিয়ার সময় আমি এমপি হলেও এরশাদের সময় আমি নির্বাচনে যাইনি।
বক্তব্যের মাঝেই শাহজাহান ওমর আমির হোসেন আমুকে দেখিয়ে বলেন, ১৯৯০ সালে আমার এ নেতা আমাকে নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলেন, তখন নেত্রী মুচকি হেসে বললো এক প্রার্থী এসেছেন যে আমার (শেখ হাসিনা) বাবার বাল্যবন্ধু মরহুম কুদ্দুস সাহেব। তাকে তো ওয়াদা করেছি। তখন আমি বললাম আমু ভাই আমি কি করবো আর তখন আমু ভাই বললো যেখানে আছো সেখানেই থাকো। এই আমু ভাই কিন্তু আমাকে আবার বিএনপিতে পাঠায়, দোষ কিন্তু আমার না। এ বলে হেসেও ওঠেন তিনি।
আমি বিএনপিতে গত ২৯ তারিখ পর্যন্ত ছিলাম। ৩০ তারিখ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার বাসায় ফোন এলো প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। হাতে সময় অল্প, স্ত্রীকে জানিয়ে রওয়ানা হলাম। আমি গেলাম, যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন ‘বসেন কমান্ডার’, আপনি আমার দল করেন। আমি বললাম করতে পারি এক শর্তে, ১৫ আগস্ট আপনার তিন ভাই শহীদ হয়েছে। আপনি যদি আমাকে চতুর্থ ভাই হিসেবে গ্রহণ করেন তাহলে। এরপর বললেন দস্তখত করেন, দস্তখত করলাম, আওয়ামী লীগে যোগ দিলাম, টিকিট দিয়ে দিলো নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আমু ভাই ও হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
নিজেকে আওয়ামী লীগের সর্বকনিষ্ঠ দাবি করে তিনি বলেন, আমার আগের যা দলবল ছিল সব নিয়ে আওয়ামী লীগের যোগদান করেছি। রাজাপুরে গুটিকয়েক নাবালক ছেলে আছে ওরাও এসে যাবে এটা কোনো ঘটনা না। আর না এলে কীভাবে আনতে হয় সে ওয়ে আমার জানা আছে, এতে কোনো গায়ের জোড় লাগবে না। আমাদের যোগ্যতায় আমাদের কোয়ালিটি ও আদর্শে তাদের আমরা আওয়ামী লীগে কনভার্ট করবো।
রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সব কিছু কন্ট্রোল করবেন জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা বানিয়ে যা লেখেন তা সত্য নাকি? আমি বলি ‘ক’ আপনারা খ-গ মিলিয়ে একটা প্রবন্ধ লেখেন। এখানে রাজাপুরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন আমু ভাইসহ জেলার নেতারা রয়েছেন- তাহলে বর্জন করলো কে। আমি বর্জনের লোক? ওরা তো কৃতার্থ ওদের দলকে আমি গৌরবান্বিত করেছি, অলংকৃত করেছি। ওরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে, বর্জন করার প্রশ্নই ওঠে না।
পরবর্তীতে তিনি আবার দল পরিবর্তন করবেন কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ। আই অ্যাম এ ফ্রিডম ফাইটার, আই ফট ফর দিস কান্ট্রি। আমি তিন বার গুলি খেয়েছি। আমার তো সংগ্রামী চেতনা। আমার চেতনা তো অন্য লাইনে হতে পারে না। এ বেসিক জিনিসটা আপনারা কেন বোঝেন না। গুরু (আমু) তো বললো আমি জয় বাংলার লোক, কতবার বলবো। তার ১৯৬৪ থেকে তার সঙ্গে অদ্যাবধি আছি। আমার বিপদের সময় তারা সাহায্য করেছে, তারা যখন বিপদে পড়েছে তখন আমার লিমিটেড সোর্সে চেষ্টা করেছি প্রটেকশন দেওয়ার জন্য।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগসহ রাজাপুর কাঠালিয়া উপজেলার নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
আরআইএস