বগুড়া: বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে আস্থা-বিশ্বাস আর নির্ভরতায় ভর করে নাঙ্গল প্রতীকে জোটের প্রার্থী করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে।
আসনটিতে পরপর দুইবার দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা জিন্নাহ এবারও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার ৭টি আসনের মধ্যে তিনটি আসন (বগুড়া-২, বগুড়া-৩ এবং বগুড়া-৪) ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও মিত্র দল জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। এ কারণে বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবারের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাকে বিজয়ের লক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লাঙ্গল প্রচারণাসহ ভোট চাচ্ছেন সাধারণ মানুষসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান এলাকার বাসিন্দা। জাতীয় পার্টির বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি পেশায় ব্যবসায়ী জিন্নাহ। ১৯৯০ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ২০১৮ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
নির্বাচন উপলক্ষে শিবগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে অনুষ্ঠিত নাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণা জনসভায় দেখা যায়, প্রতিটি জনসভাস্থলে মিছিল নিয়ে দলে দলে নেতাকর্মীরা সমবেত হয়। তারা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে ও শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে পুনরায় ও তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে দেখার আশা ব্যক্ত করেন। জনসভাস্থলে নারীদের উপস্থিতিও বেশ চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি জনসভাস্থলই সমর্থকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ উপজেলার ভোটাররা জিন্নাহকে কেন্দ্র করেই শিবগঞ্জের উন্নয়নের রূপরেখা কল্পনা করছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই যোগ্য অভিভাবক জিন্নাহকে বেছে নেওয়ার কথা বলছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে দেশের সবার মধ্যে যখন আতঙ্ক বিরাজমান ছিল। সেই সময়েও নিজের এলাকার মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে পাশে ছিলেন জিন্নাহ। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এলাকার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এই জনপ্রতিনিধি। নির্বাচিত হওয়ার ১০ বছর আগে যেসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যে কাজ হয়নি, সেসব কাজ আগে হাতে নেন তিনি।
রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট সংস্কারসহ নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো, চলাচলের অনুপযোগী রাস্তাগুলো সংস্কার করেন জিন্নাহ। এছাড়া বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ, আইসিটি ভবন নির্মাণে তার প্রত্যক্ষ অবদান দেখেছেন ভোটাররা। তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল শিবগঞ্জের নাগর ব্রিজ সংস্কার। এই ব্রিজ বরাবরই বিগত সময়ের এমপিদের চোখের আড়ালে ছিল। অথচ ব্রিজটি দিয়ে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
কৃষিভিত্তিক উপজেলা শিবগঞ্জের গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়নে চলতি বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের (৪ তলা ভিত্তি বিশিষ্ট দ্বিতল) ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এমপি জিন্নাহ। এছাড়া কৃষকদের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি নজর রেখেছেন শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। পাশাপাশি দুস্থ প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার, নারীদের সেলাই মেশিনসহ নানা ধরনের সহায়তা অব্যাহত থেকেছে তার সংসদীয় এলাকায়। এমপি জিন্নাহর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো, দশম নির্বাচনে তার প্রতিশ্রুতি ছিল জুয়া, হাউজি মেলা বন্ধ করা। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। শিবগঞ্জের এসব অবৈধ মেলা বন্ধ করে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।
জেলা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানান, এমপি জিন্নাহ নিজ দলের লোকজনের প্রতি সবসময় খেয়াল রেখেছেন। তার আরেকটি বড় গুণ তিনি জাতীয় পার্টির নেতা হলেও কখনও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আলাদা চোখে দেখেননি। শিবগঞ্জ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে সব দলের মানুষের কাছে তিনি সমানভাবে সম্মান পেয়েছেন। এই গুণের প্রতিদান এমপি জিন্নাহ অবশ্যই পাবেন। বিগত দশ বছরে তিনি যা করেছেন, তার আগে কেউ সেই কাজ করেননি। এবারও ভোটের মাঠে ভোটারদের কাছে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে আশা নেতাকর্মীদের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মানুষের বিপুল ভোটে আমি জয় লাভ করবো। এই নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করছি, বিপুল সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। ৭ তারিখের জন্য মানুষ প্রস্তুত হয়েছে। তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে। আমি বিশ্বাস করি আগামী ৭ তারিখ নির্বাচনে এই উপজেলার মানুষ আমাকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেই।
তিনি বলেন, আমি একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। দশম ও একাদশ সংসদে আমি এ নির্বাচনী এলাকার এমপি ছিলাম। শিবগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। বিশেষ করে মানুষের নিরাপত্তা যেটি মানুষ বেশি চায়। আমাকে নির্বাচিত করলে এ আসনের মানুষ নিরাপদে থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন। তিনি তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দশম ও একাদশ মেয়াদে যে কাজগুলো অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলোর সমাপ্তের আশা ব্যক্ত করেন।
এদিকে বগুড়া-২ আসনে নির্বাচনকে ঘিরে নাঙ্গল প্রতীক প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাকে বিজয়ের লক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম রাজু, সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেব, ময়দানহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু জাফর মন্ডল, রায়নগর ইউনি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম শফি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছাত্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এম এ লতিফ, গোলাম মোস্তফা খাঁন, মো. সিরাজুল ইসলাম, আবেদ আলীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, জাতীয় পার্টির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ (লাঙ্গল), মো. বজলুর রহমান (সোনালি আঁশ), মো. আকরাম হোসেন (কাঁচি), বরকত উল্লাহ (টেলিভিশন), মো. মুনসুর রহমান শেখ (ডাব), আল ফারাবি মো. নুরুল ইসলাম (বেঞ্চ), মোছা. বিউটি বেগম (ট্রাক)।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৪
কেইউএ/এসএম