মেহেরপুর: মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের আনন্দ মিছিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বারসহ উভয় পক্ষের অন্তত পক্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯ থেকে ১০টা পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করায় তার কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নানের পক্ষের নেতা মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন বিশ্বাসের নেতৃত্বে এ হামলা ঘটেছে বলে অভিযোগ নৌকার কর্মী-সমর্থকদের।
আহত আনন্দবাস গ্রামের কিয়ামদ্দিনের ছেলে, গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগোয়ান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফেরদৌস হোসেন ওরফে মেন্তা মেম্বার (৬০), আনন্দবাস গ্রামের আলমাজুল ইসলামের ছেলে আশিক (২৪), মৃত উসমান আলীর ছেলে আয়াত আলী (৫৫), আলতাব হোসেনের ছেলে অন্তর আলী (১৮), জিহুত মোল্লার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪০), বাগোয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেনের ছেলে নাহিদ হোসেন (৩৪), ওয়াজ করণীর ছেলে পিয়াস হোসেন (২৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (১৪), ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাশিদুল ইসলাম (১৮), খোদা বিশ্বাসের ছেলে টুকু বিশ্বাস (৫০), ফজলু মোল্লার ছেলে আব্দুল হালিম (৩২), পটল মোল্লার ছেলে মাসুম হোসেন (২৯), স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ট্রাক প্রতীক) কর্মী হাবিবুর রহমানের ছেলে আশিক (২৪), ময়না বিশ্বাসের ছেলে রানা হামিদ (২১), মৃত কামরেজ মিয়ার ছিল শফিকুল মিয়া (৪৫) ও আলাউদ্দিনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩২), পটল সিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৭) মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদের মধ্যে ফেরদৌস হোসেন, আব্দুল হালিম, হাসিবুল ইসলাম ও আশিকুর রহমানকে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। সেখানে মেন্তা মেম্বারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে রেফার করেন চিকিৎসকরা।
মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আনন্দবাস গ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ূব হোসেন ও নৌকার কর্মী ইমরান হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার ফেরদৌস হোসেন ওরফে মেন্তার নেতৃত্বে সোমবার রাত ৮টার দিকে আনন্দবাস বাজার থেকে একটি আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি আনন্দবাস গ্রামের উত্তরপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া বিশ্বাসের বাড়ির সামনে পৌঁছালে কয়েকজন কর্মী-সমর্থক নাচানাচি করলে জিয়া বিশ্বাস বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। মেন্তা মেম্বার মিছিলের কর্মী-সমর্থকদের নাচানাচি না করার নির্দেশ দিয়ে তাদের নীরব থেকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এ সময় জিয়া বিশ্বাস মেন্তা মেম্বারকে গালিগালাজ করতে থাকেন। পরে রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে ফেরদৌস হোসেন ওরফে মেন্তা মেম্বারকে লাঠিসোঁটা ও ইট দিয়ে পেটাতে থাকেন। মেন্তা মেম্বার রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন অন্য কর্মী-সমর্থকরা।
এক পর্যায়ে জিয়া বিশ্বাসের বাড়ির ছাদের ওপর থেকে র্যালির কর্মী-সমর্থকদের ওপর মতো ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে আমাদের পক্ষের প্রায় ৪০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল দত্ত জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে কেউ না ঘটাতে পারে সে লক্ষ্যে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মামলা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৪
আরবি