ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত আ.লীগের

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত আ.লীগের

ঢাকা: দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও সহিংসতা ঠেকাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আইন সংশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই চালু করা হয়েছিল।

আপাতত আগামী উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত রাখবে দলটি।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি শুধু উপজেলার কথা জানান। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার অভিমত দিয়েছে ওয়ার্কিং কমিটি। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত পরে দলের স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ড ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় চূড়ান্ত করা হবে। তবে ওয়ার্কিং কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

এদিকে সভায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু আগামী উপজেলা নয়, আপাতত আগামী সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুয়েকদিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনে পদ্ধতি চালু করা হয়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হয়।

সূত্রগুলো জানায়, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের মার্কা একজনকে দেওয়া হলেও প্রত্যেক জায়গায় দলের একাধিক নেতা বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। এতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা তৈরি হয়। এসব সমস্যা ও সহিংসতা ঠেকাতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের প্রতীক না দিতে সভায় মতামত দেন অধিকাংশ নেতারা।

এ সময় কোনো কোনো নেতা তাদের বক্তব্যে বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায়। এ অবস্থায় আবার স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হলে দলের আরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটা হলে জাতীয় নির্বাচনে যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল তৈরি হয়েছে তা আরও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে দলীয় প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন উন্মুক্ত থাকলেই ভালো হবে।  

সূত্র আরও জানায়, দলের নেতাদের মতামত জানার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তাহলে আপাতত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। মার্কা না দিলেই যে দ্বন্দ্ব হবে না, তা নয়। তোমরা বলছো, মার্কা দিও না। আমি মনোনয়ন দেব না, আমারও ঝামেলা কমে গেল।  

আপাতত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এতে ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে। যিনি জনপ্রিয় প্রার্থী তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন। ভোটার উপস্থিতির বিষয় নিয়েই তো ‘মাতবররা’ সবক দেন। উন্মুক্ত নির্বাচন হলে ভোটার বাড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারির ২৩, ২০২৪
এসকে/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।