ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সীমান্তে বিজিবি সদস্য হত্যা: জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
সীমান্তে বিজিবি সদস্য হত্যা: জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি

ঢাকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন হত্যার তদন্ত চায় বিএনপি। দলটি দাবি করেছে, জাতিসংঘ যেন এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে।

ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্যরা গুলি করে রইসের ‘হত্যাকাণ্ড’ ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

জানা গেছে, শুক্রবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি একটি বৈঠক করে। এ সময় ভারতের সঙ্গে সীমান্তে বিজিবি সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। সেখানে বিজিবি সদস্য রইসুদ্দিনের নিহতের ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়।

রিজভী গণমাধ্যমে যে বিজ্ঞপ্তিতে পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস ও রক্তস্নাত। ভারত কর্তৃক বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্রাণহানির সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ৭ বছরে ২০১ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফ’র পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। বিএসএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয় ‘তিনি (নিহত ব্যক্তি) বিজিবির সদস্য তা তারা বুঝতেই পারেনি, তিনি লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে ছিলেন এবং পাচারকারী দলের সঙ্গে তাকে ভারতের সীমানার ভিতরে দেখা গিয়েছিল। একজন বিজিবি সদস্য কীভাবে লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন সেটি তাদের বোধগম্য নয়। এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ গরিমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাদের হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গি, টি-শার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন না।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিএসএফ’র মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফ’র এহেন আচরণের ইতিহাস যুগপৎ হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বরাবরই বিএসএফ’র কৃত অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে। তাদের আচরণে মনে হয় তারা আদিম ও মধ্যযুগ পেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ জুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড-স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা।

এতদিন বিএসএফ’র হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। এক দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে আজ তাবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে। দখলদার আওয়ামী সরকার আজ দেশ বিরোধী ঘৃণ্য চক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিজিবিকেও এখন বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বিএসএফ এর ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকাণ্ডের আশকারা দেওয়া দিল্লীর উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা। শেখ হাসিনা দিল্লীর সঙ্গে অধীনতামূলক চিরস্থায়ী ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ফলশ্রুতি হচ্ছে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকা। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যার ঘটনা পরের দিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাবিলাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরি। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্ত রক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতি নির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি।

সেজন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে তারা কোনো দায় বোধ করে না। ফেলানীসহ সব হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মহল এমনকি ভারতের বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এর কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনও ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। বিএনপি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছে। পাশাপাশি নিহত ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
টিএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।