ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়েছে সরকার: রিজভী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়েছে সরকার: রিজভী

ঢাকা: আওয়ামী লীগ দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে ভয়াবহ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী ডামি সরকার। গণতন্ত্রহীনতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার নজিরবিহীন দরপতনে জনগণ আতঙ্কিত।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ঋণ শোধ করতে ট্যাক্স—ভ্যাট—কর খাজনার পরিধি—আওতা বাড়িয়ে জনগণের গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করার অবস্থায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশি—বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের দুইটি অর্থ বছরের বাজেটেরও বেশি। যে শিশু ভূমিষ্ট হচ্ছে আজ তার মাথায়ও প্রায় লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা।

রিজভী বলেন, গরিবের বাঁচা—মরার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি জরুরি পণ্যের দাম উল্কার গতিতে বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বন্ধ হয়েছে, নতুন করে গরিব হয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। অনাহার—অর্ধাহারের বৃত্তে আটকিয়ে আছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। মানুষের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, এখন ঋণ করে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার লুটপাট আর দুঃশাসনের কারণে লাগামহীনভাবে বেড়েছে সব পণ্যের দাম। দেশের এখন সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি আর সবচেয়ে মূল্যহীন গণতন্ত্রকামী জনগণের মতামত।

তিনি আরও বলেন, সর্বত্রই অস্বস্তি—অস্থিরতা। দেশি—বিদেশি শ্বাসরুদ্ধকর ঋণের তলে ডুবিয়ে দেশকে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সঙ্গে তুলনা করা আওয়ামী লীগের ধাপ্পাবাজ মন্ত্রীরা এখন ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে।  

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর বাইরে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ডামি সরকারের ঋণ ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত ৭ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ মাত্র শুরু হয়েছে, এখনই ডলারে কুলাচ্ছে না। কারণ ডলার তলানির দিকে ক্রমধাবমান।

তিনি বলেন, এ বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ ডামি সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকট, ডলারের বিপরীতে গত কয়েক মাস ধরে টাকার মানের ক্রমাগত পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নিয়ে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুদ্রামান হারানোর সঙ্গে সঙ্গে ডলার দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে দেশি মার্কেটে। রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষের পথে। দেশের সম্পদ লুটপাটের দরজা খুলে দিয়েছে দখলদার সরকার।

রিজভী বলেন, দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের অভিমতও তাই। অযোগ্য লুটেরা সরকার ক্ষমতায় থাকলে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। ক্ষমতায় টিকে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই শেখ হাসিনা দেশকে দেউলিয়া করছেন। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে গভীর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী ডামি সরকার গত চার দিন আগে এক প্রজ্ঞাপনে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী ৪৩টি শিল্প খাতে প্রণোদনা কমিয়ে দিয়েছে।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষ অংশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে, গুম খুন অপহরণ করে ভিন্ন দল ও মতের মানুষকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সম্মুখে ঝোলানো হয়েছে মৃত্যুর খড়গ। অপরদিকে শেখ হাসিনার বিনাভোটের সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশ নিয়ে ভাগ—বাটোয়ারার হাট বসেছে। দেশ এবং জনগণের স্বার্থের প্রতি তোয়াক্কা না করে বহিঃর্বিশ্বের যাকে যা দিয়ে খুশি রাখা যায় শেখ হাসিনা তাই করছেন, তাই দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার এখন একদলীয় কতৃর্ত্ববাদী দেশের কাছ থেকেও গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট নিচ্ছে। অবৈধ ক্ষমতার প্রতি শেখ হাসিনার লালসার কারণে গণতন্ত্রের পায়ে বেড়ি, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এখন নির্বাক মৌনতায় পরিণত করার প্রচেষ্টায় মানুষের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। জনগণের প্রতি সরকারের চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিস্পর্ধী উচ্চারণকে থামানো যাবে না। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
টিএ/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।