লক্ষ্মীপুর: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে অতর্কিত হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী এম সজীবসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
শুক্রবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া এলাকার যদির পুকুর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন গুলিও করেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ।
অভিযোগ উঠেছে, চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দুই গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজ উদ্দিন ও চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আহতরা হলেন, চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মো. সজিব, ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুল পাটওয়ারী, সাইফুল ইসলাম জয় ও রাফি।
এরা ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, রাতে ছাত্রলীগ নেতাদের একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে আড্ডা দিচ্ছিল। এসময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা ও গুলি চালানো হয়। পরে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়।
আহত সজিব, সাইফুল ও রাফির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে চিকিৎসক। আহত জয়কে সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোঁড়া হয়৷ এতে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের শরীরে ছররা গুলির আঘাত রয়েছে।
তিনি জানান, চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী বাবলুর সাথে সম্প্রতি তার বিরোধ দেখা দেয়। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের গ্রুপিং চলছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা তার সঙ্গেই ছিল। থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ ছিলেন তার একনিষ্ঠ অনুসারী। এতে চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকা কাজী বাবলুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সম্প্রতি চাঁদাবাজির টাকা ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে মাসুদের সঙ্গে বাবলুর দূরত্ব সৃষ্টি হয়৷ পরে মাসুদ চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবির আহম্মেদের সঙ্গ নিলে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
ছাত্রলীগের মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, দ্বিতীয় রমজান থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী বাবলুর সঙ্গে আমার বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরেই আমার লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সজিবের অবস্থা ভালো নয়। তাকে সদর হাসপাতাল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। সম্ভবত তার মাথায় গুলি লেগেছে।
বক্তব্য জানতে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় দাস বলেন, আমরা কাউকে গুলিবিদ্ধ পাইনি। আহতদের কানের নিচেসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে থেতলানো ছিল। সজিব নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকেসহ তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জয় নামে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজ উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে হামলা-মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) ভোরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকাল ১০টার দিকে পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে আহতদের সমর্থকেরা। বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলে নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়দের মধ্যে এখন সে আশঙ্কাই বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
আরএ