ঢাকা: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকার বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী।
শনিবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
'সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, অনুপ্রবেশকারীদের নজিরবিহীন তান্ডব, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিসবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত বৃহস্পতিবার সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত বহু আগে জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, জামায়াত-শিবিরের চতুরতা সম্বন্ধে সরকারের কোনো ধারণা নেই। অথবা যারা এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার দায়িত্বে, তারা জামায়াতের অনেক আর্থিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, যে ওলামারা এতদিন জামায়াতের পাপাচারিতা দেশবাসীকে অবগত করতেন, এখন তাদের সন্তানরা জামায়াতের অর্থসহ সহযোগিতা, ব্যবসা, আমদানি-রফতানির সুযোগ- সুবিধা পেয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে বৃহৎ ইসলামী ঐক্যের আওয়াজ উঠিয়েছিলেন। জামায়াতের কথিত হেকমতের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যদি জামায়াতের প্রকৃত রূপ দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করা না যায়, তবে এ নিষিদ্ধ কোনো কাজে আসবে না।
জামায়াতে ইসলামের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অঙ্গ সংগঠন ও প্রক্সি গ্রুপগুলোর ব্যাপারে সরকার কতটুকু জানে আমাদের জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে সরকার বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ১৪ দলের ৫ নেতার বাইরে সরকারের পরীক্ষিত অনেক মিত্র ছিল। সরকার তাদের সঙ্গে কথা না রাখলেও তারা সরকারের বিপদের মুহূর্তে পাশে থেকেছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট সব পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে ছিলোৎ। তবে দুর্নীতি ও মন্ত্রীদের অনেকের অতিরিক্ত কথা, এমপিদের জমিদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় সরকারের ভেতরের অনেকেই আমাদের দূরে রাখতে চান। এতে আমরা দুঃখিত নই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য যে কোনো ত্যাগস্বীকারে আমরা প্রস্তুত।
এ সময় মিসবাহুর রহমান চৌধুরী দলের ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
তাদের দাবিগুলো হলো-ছাত্র আন্দোলনে নিহত প্রতিটি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে; প্রকৃত শিক্ষার্থী যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, যাতে কোনো অবস্থায় এদের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত না হয়; নিহতদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে; যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে; এবং জামায়াত-শিবির ও তাদের প্রকাশ্য ও গোপন অঙ্গ সংগঠনগুলো যাতে দেশে আর কোনো নৈরাজ্যের সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সুযোগ সন্ধানীরা যেন কোনো সীমালঙ্ঘন বা মতবলবাজী করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
এ সময় বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব আল্লামা মনিরুজ্জামান রব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জুলকার নাইন, মাওলানা আবু হানিফ, মাওলানা আব্দুর রহিম হাজারী, আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্জ আসাদুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক, মুফতি বোরহান উদ্দিন আল আজিজি, মাওলানা তাজুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন বাবু, ঢাকা মহানগর শাখার যুব বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আমজাদ হোসাইন, মুফতী মুশফিকুর রহমান, আলহাজ্জ আশরাফ হোসাইন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সচিব আশরাফ হোসেন সুমন ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলহাজ্ব শাহ্ আলম খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৪
এসসি/জেএইচ