ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কথা ভুলে গেলে বৈষম্য দূর হবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৪
‘পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কথা ভুলে গেলে বৈষম্য দূর হবে না’

ঢাকা: পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কথা ভুলে গেলে দেশে বৈষম্য দূর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘের আহ্বায়ক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ‘এরপর কী হবে’ শীর্ষক অংশগ্রহণমূলক গণপাঠ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অধ্যাপক এসআইএমজি মান্নান হলে এ গণপাঠের আয়োজন করে সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ।

আন্দোলনের সময় খুন-ধর্ষণ বন্ধ ছিল জানিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন আবার সেটা শুরু হয়েছে। এটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অংশ। এ ব্যবস্থাটা রয়ে গেছে। আজকে বৈষম্যের কথা বলতে গেলে আমাদের পুঁজিবাদের কথা বলতে হবে, সাম্রাজ্যবাদের কথা বলতে হবে। এগুলো ভুললে আমাদের বৈষম্য দূর হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে যা ঘটেছে সেটিকে অনেকে বিপ্লব বলছেন, এটা ঠিক নয়। এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলাও ঠিক নয়। এটা একটা সরকারের পতন। যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এটি ছিল কোটা সংস্কারের আন্দোলন। কারণ আমাদের দেশে যে উন্নয়ন ঘটেছে, সেটি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেনি। আমাদের এখানে বেকারত্ব ভয়াবহ ছিল। এ বেকারত্বের প্রশ্নটা নিয়েই এ অভ্যুত্থানটি ঘটলো। মানুষের বিক্ষোভ, আকাঙ্ক্ষা এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের শক্তিটা দেখলাম। যে শক্তিটাকে দমিয়ে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের যে নির্বাচন হয় না, সেটা তারুণ্যকে দমন করার জন্য সব সরকারই করে। সেটা আমাদের কাছে খুব স্পষ্ট। এ আন্দোলনে মেয়েরাও অংশ নিয়েছে, যা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, আন্দোলনের সময় খুন, ধর্ষণ বন্ধ ছিল। এখন আবার সেটা শুরু হয়েছে। এটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অংশ। এই ব্যবস্থাটা রয়ে গেছে। আজকে বৈষম্যের কথা বলতে গেলে আমাদের পুঁজিবাদের কথা বলতে হবে, সাম্রাজ্যবাদের কথা বলতে হবে। এগুলো ভুললে আমাদের বৈষম্য দূর হবে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা যে সমাজ চাই, সে সমাজের সম্পদের মালিকানা হবে সামাজিক। আমরা ব্যক্তিগত মালিকানার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি।

তিনি আরো বলেন, এখন যে সরকার রয়েছে, সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের দায়িত্ব নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কাজেই আমাদের দেখতে হবে, এই নির্বাচনে আমরা (বামপন্থী) কি করতে পারি। বামপন্থিরা কি একটি জোট করতে পারে? এবং এই জোটের মাধ্যমে যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তারা কি একটি আশা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথাও ভাবতে হবে। এটা করলে বামপন্থীরা কয়েকটি আসন পেতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পেছনে তাদের দীর্ঘদিনের জুলম রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এ জুলুম মানুষকে অনেক বেশি ক্ষিপ্ত করেছে। যার এক পর্যায়ে আমরা গণঅভ্যুত্থান দেখলাম। আমরা আর আগের ব্যবস্থা চাই না, ফ্যাসিবাদী-স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চাই না। সকলের স্বাধীনতা চাই। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট কাঠামো এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে পরিষ্কার হয়নি। এ আন্দোলন যে সরকার পতনের আন্দোলনে গেল সেই লক্ষ্যও আন্দোলনকারীদের ছিল না। এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। কারণ যারা আন্দোলন করছিল, তারা এ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতও ছিল না। শেখ হাসিনা প্রতিদিন নানা রকম ব্যবস্থা করে আন্দোলনকারীদের টেনে নিজের পালানোর ব্যবস্থায় নিয়ে গেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এর পরের সংগ্রাম নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে ততদিন ধরে চলবে। একটি অন্তবর্তী সরকার হয়েছে। সরকার হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পলিসি বলা হয়নি। তারা কি চায়, কি ধরনের দেশ গড়তে চায়, কিভাবে গণতন্ত্র আনতে চায়, স্বৈরাতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটি কি?

গণপাঠে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, কবি হাসান ফকরি, কামাল উদ্দিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৪
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।