নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার পালিয়ে গেছে, ২০০১ সালেও পালিয়ে গিয়েছিল। মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশে অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আজ অনেকেরই তো স্টেজে থাকার কথা। তারা এখানে নেই। তেল আর পানি যেমন মিশে না, গিয়াসউদ্দিন আর খারাপ মানুষ তেমন মিশে না। আপনি যত বড় নেতার সঙ্গে চলেন না কেন, আমি সেটাকে কেয়ার করি না।
আমাদের প্রথম কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফতুল্লার মানুষকে যে বঞ্চিত হয়েছে, এ জায়গা থেকে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। এ বৈষম্যের হাত থেকে ফতুল্লার মানুষকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে ফতুল্লাকে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখন আমাদের এটাই দাবি। এগুলো হলো আমাদের রাস্তার, ড্রেনেজসহ কাজগুলোর কথা বলতে হবে না। আমি যতদিন এটা বাস্তবায়ন করতে না পারি ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে আমি কাশিপুর ইউনিয়নবাসীর কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি। আপনারা এ এলাকার গডফাদারের বিরুদ্ধে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিলেন। আমি সবসময় সেজন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
তিনি বলেন, এ আন্দোলনের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। আমি আমার প্রিয় নেতাদের ও কর্মীদের বলতে চাই। আমার এ কথা হয়ত খুব ভালো লাগবে না, কিন্তু এগুলো বলা প্রয়োজন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সতেরো বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছে। আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন হয়েছে। আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করিনি, বুকে গুলি নিয়েও এগিয়ে গিয়েছি আমরা।
তিনি বলেন, আমরা অনেক ত্যাগের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি। এখন আমাদের কী করণীয়। এ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে কী পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে শেখ হাসিনা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা নিজে বাহিনী বানিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তবুও এ আন্দোলনে স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ তারিখ থেকে ৮ তারিখ দেশে কোনো সরকার ছিল না। এ কয়েকদিন কিছু নৈতিকতাহীন লোক লুটপাট, চাঁদাবাজি করেছেন। তারা মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। পুলিশ নৈতিকতা হারানোর কারণে মনোবল হারিয়ে গেছে। তারা রাজধানী থেকে পালিয়েছে, সারাদেশ থেকে পালিয়েছে। স্বৈরাচার চলে গেলেও তাদের দোসররা রয়ে গেছে। তারা চেষ্টা করছে কীভাবে জনজীবন বিপন্ন করে তোলা যায়। আমাদের প্রথম কাজ হল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটানো। কেউ যেন চাঁদাবাজি, মাস্তানি করতে না পারে। কেউ যেন শিল্প কারখানায় লুটপাট করতে না পারে।
আপনাদের মনে রাখতে হবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো করা। এগুলো পুড়িয়ে ফেললে ক্ষতি আমাদেরই হবে। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতে গিয়ে ন্যায় বিচার পাইনি। স্বৈরাচারের হুকুম মেনে আদালত রায় দিত। আমাদের সেই আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা কোনো বিচার আসলে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। আর সরকারের কাছে দাবি জানাই, আদালতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে এমন মানুষকে নিয়োগ দেবেন।
১৯৭১ সালে আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো বলে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা ১৭ বছরে তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দিনের ভোট রাতে করেছে। ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণা করে দিত। আজ আমরা স্বৈরাচার বিদায় করতে পেরেছি কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারিনি। আমরা গণতন্ত্র এখনো আনতে পারিনি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের এখন আন্দোলন করতে হবে।
স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশ করতে পারেনি। মানুষ কথা বলতে পারেনি। বললেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার করত। আমাদের সেই বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ সরকার লুটপাট করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলেছে। ওদের বাড়িতে অভিযান চালালে বস্তায় বস্তায় টাকা পাওয়া যায়। এত অর্থ লুট করেছে যেসব নিতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৪
এমআরপি/জেএইচ