ঢাকা: শিগগির নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথ-নকশা না দিলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থা তৈরি হতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো? শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি নামের একটি সংগঠন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ সংগঠনের সদস্য।
কতদিনের মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন, এমন প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যে যে ধস নেমেছিল, তা মেরামত বা সংস্কার করতে হবে। যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা এ সরকারের দায়িত্ব। তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, অনেকগুলো সংস্কার আছে, যা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, তা নির্বাচিত একটি স্থায়ী সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে পারে এ সরকার। বিভিন্ন কমিশন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়াটা চলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে একটি প্রস্তুতি বা পথনকশা বা উদ্যোগ, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, কী কী পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। যথাযথভাবে এ ঘোষণা না এলে, এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে একটি অনাস্থা বা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে। তা থেকে বাঁচার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করা উচিত বলে আম মনে করি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, কতদিনের মধ্যে নির্বাচন চাই, সেই তারিখ তো নির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা মনে করি, সব কাজই আপনি যদি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং দক্ষতার সঙ্গে করেন তাহলে যত সময় লাগবে, গুরুত্বের সঙ্গে না নিলে তার থেকে বেশি সময় লাগবেই।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এটি নেবে এবং যথা শিগগির সম্ভব, সে বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে। নইলে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, অনাস্থা তৈরি হওয়ার শঙ্কা আছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি। সেগুলো যাতে বন্ধ হয়। সেজন্য সরকারের এ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বহু বছরে মানুষের মধ্যে বঞ্চনা আছে, মানুষের মধ্যে অনেক রকমের ক্ষোভ আছে, অনেক রকম সমস্যা আছে। সেগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
তিনি বলেন, জবরদস্তি কিংবা কেউ আন্দোলন করলে তাকে ট্যাগ লাগানো এ প্রবণতা, যা অতীতের সরকারের সময়ে ছিল, তা যেনো অব্যাহত না থাকে। যেমন অটোরিকশা (ব্যাটারিচালিত রিকশা) বলেন কিংবা অন্যান্য পেশাজীবী বলেন, তাদের জোর-জবরদস্তি করে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে, সমাধানের পথে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের মর্যাদা দিয়ে সরকারের ভূমিকা পালন করলে আমি মনে করি, অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হবে। সমাজের মধ্যে সহিংসতা কিংবা জোর-জবরদস্তির প্রবণতা থেকে আমরা রক্ষা পাব।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে স্বৈরশাসন বা ক্ষমতা ও সম্পদের কেন্দ্রিকতার জন্য যে ধারাগুলো যোগ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা আমাদের প্রধান দাবি। আরেকটি হলো, বাংলাদেশে যে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষার মানুষ আছে, তাদের প্রতি যেনো কোনো বৈষম্য না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে সেই প্রস্তাবগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আগামী শনিবার বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামের বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লৈঙ্গিক, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের মানুষের সমাবেশ হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, মাহা মির্জা, সীমা দত্ত, সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, গুম থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা, মাহতাব উদ্দীন, বাকী বিল্লাহ, রাফিকুজ্জামান ফরিদ, আফজাল হোসেন, অমল ত্রিপুরা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৪
এসসি/আরএইচ