বরিশাল: শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার করা না হলে আবারো স্বৈরাচারের উদ্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী স্বৈরাচারের পতন হয়েছে।
শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অনুষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থান ও গণ-আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশবিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, মেধার প্রশ্ন না তুলে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ছেলেমেয়ের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল-কলেজে ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে আমরা এমন এক নতুন প্রজন্ম পাব, যারা দেশের জন্য উন্নত জনশক্তি-মেধাশক্তির শর্ত পূরণ করবে।
তিনি বলেন, বিপ্লবের ইতিহাস দেখবেন, বিপ্লব নিজেই নিজের ছেলেদের খেয়ে ফেলে। যারা আন্দোলনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, এখন তারা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে। আমরা নানা দিক থেকে দাবি উত্থাপন করেছি, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সভা-সমিতি করার অধিকার ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাস্তবক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার করার বিষয়ে হাতই দেয়নি। একই অবস্থা আমাদের স্বাস্থ্যের বিষয়েও প্রযোজ্য। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হচ্ছে।
বিদ্যুতের প্রসঙ্গ টেনে এই অধ্যাপক বলেন, মূল উৎপাদন শক্তি বিদ্যুৎ, যা না থাকলে কারখানা চলে না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে, আমরা যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনো কাজে আসছে না। ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, তা কোনো কাজে আসছে না।
তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে ব্যাপক হারে দেশের সম্পদ টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার হয়েছে। এখন এই সরকারের উচিত সেই টাকা দেশে ফেরত আনা এবং যাদের কাছে জমা আছে তা বাজেয়াপ্ত করা। কিন্তু সরকার একজনের টাকাও বাজেয়াপ্ত করেনি বা বিদেশ থেকে আনেনি। এদিকে শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ায় বন্ধ হচ্ছে কারখানা। সেদিকে সরকারের পদক্ষেপ নেই।
সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, এই আন্দোলন আমাদের নতুন কথা উত্থাপন করার অবকাশ দিয়েছে। এর মধ্যেই অভ্যুত্থানের সার্থকতা। অভ্যুত্থানের সামনে অজস্র বিবাদ বিরাজমান। অনেকেই বিপথগামী হতে চাচ্ছেন। নৈরাজ্য তৈরি করলে হবে না, আমাদের গভীর ধৈর্যের সঙ্গে অগ্নিপরীক্ষায় পার হতে হবে। কোনো মায়া বা মোহ ৭২ এর সংবিধানের জন্য রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, ১৯৭১ এর ব্যবসা যারা করেছিলেন, তারা কি ১৯৪৭-কে কখনো ক্রিয়া সাধন করেছেন? ইতিহাসের ৫৩ বছরে ১৯৪৭ নিয়ে সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তারা নিজেরা ৪৭ অবলুপ্ত করে দিয়েছে। এ জন্য তারা মনে করছে ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ১৯৭১ এর সব স্মৃতিকে মুছে দেবে। এ ধরনের কাজ করার লোকের অভাব নেই, সেজন্য আমরা ২০২৪-কে ভুলে যেতে পারি না।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় শুভর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম কচি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উন্মেষ রায়, সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট সাইদুল হক নিশান, বরিশাল ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এ কে আজাদ, তপংকর চক্রবর্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার প্রমুখ।
বরিশাল জেলা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠক হুজাইফা রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
এমএস/আরএইচ