ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের হামলা, বিএনপির ৪ নেতা আহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের হামলা, বিএনপির ৪ নেতা আহত

যশোর: এবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর দলবল নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন যশোরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান আনিসুর রহমান।  

ঠেকাতে গেলে সন্ত্রাসীরা যুবদলের তিন নেতা এবং বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন।

 

যশোর সদর উপজেলা হৈবতপুর ইউনিয়নের মাঠে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।  

এর আগে আনিস মেম্বার একজন তরুণ ও একজন তরুণীকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করে সেই ভিডিও ভাইরাল করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি, ব্যাভিচারসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রতিবারই তিনি থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

আহতরা হলেন হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাজু (৪৪), চার নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং চার নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধ্যক্ষ পাপ্পু। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

দুপুর দেড়টার দিকে শফি নামে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিজেকে আহত দাবি করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে হৈবতপুর এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়েন। এলাকাবাসী তাকে হাসপাতাল চত্বরেই মারপিট করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করেন চিকিৎসকরা।

আহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চাষের জমি রয়েছে পার্শ্ববর্তী হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামের মাঠে। চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান আনিসুর রহমানেরও জমি রয়েছে ওই মাঠে।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আনিসুর রহমান হৈবতপুর গ্রামের মানুষের জমির আইল কেটে জোর করে নিজের জমিতে পানি প্রবেশ করাতেন। সে সময় কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলার সাহস দেখাননি।  

কিন্তু মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একইভাবে আনিসুর রহমানসহ তার লোকজন অন্যের জমির আইল কেটে নিজেদের জমিতে পানি নেওয়ার সময় হৈবতপুর গ্রামের মানুষের প্রতিবাদের মুখে পড়েন।  

একপর্যায়ে আনিসুর মেম্বার দুটি মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসীকে জড়ো করেন। তারা দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হৈবতপুর গ্রামের বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালান। খবর পেয়ে হৈবতপুর গ্রামের মানুষও সেখানে জড়ো হন।

বিষয়টি জানার পর যুবদল নেতা রাজু মিমাংসার জন্য সেখানে যান। তিনি উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করিয়ে দেন। হৈবতপুরের লোকজন বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে আনিসুর মেম্বারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালান। সন্ত্রাসীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হন যুবদল ও বিএনপির ওই চার নেতা।  

খবর পেয়ে হৈবতপুর থেকে দলে দলে সাধারণ মানুষ ছুটে গেলে আনিসুর মেম্বারসহ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান।
 
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিঠুন কুমার জানান, আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় বেশ কয়েকটি ক্ষত হয়েছে।  

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ফের সক্রিয় হয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। বৈহতপুরের ঘটনা তার একটি। সেখানে সাধারণ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসী আনিস বাহিনী। এসময় গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে আহত হয়েছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।

সন্ত্রাসী আনিস মেম্বার ২০২২ সালে দুজন তরুণ-তরুণীকে প্রকাশে জুতাপেটা করে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সোস্যাল মিডিয়ায়। সেসময় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক শোরগোল হলেও আওয়ামী লীগ করার কারণে তিনি পার পেয়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।