নরসিংদী: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে। তবে যেন তেন মার্কা নির্বাচন আমরা চাই না।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীর নরসিংদী জেলা শাখার উদ্যোগে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়েতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২৪ সালের জুলাই-আগস্টে এ জাতিকে একটা ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধাক্কা এ জাতিকে দিতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যেসব লোকেরা ভোটার হয়েছে, কিন্তু নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সে সমস্ত ভোটরদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। জুলাই আগস্টের আন্দোলন সফল করতে সারাবিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচর পতন আন্দোলন করতে গিয়ে বিদেশে আমাদের ভাইয়েরা জেলে গেছেন। তারা এক সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। রেমিট্যান্স বন্ধ করে স্বৈরচার সরকারকে লাল ফ্ল্যাগ দেখিয়েছিলেন। তাদের স্যালুট জানাই। আমরা চাই এ নির্বাচনে প্রত্যেকটা প্রবাসী ভাই-বোনদের ভোটার নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, মাঠ প্রশাসনে যারা আছেন। যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেননি। দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যাদের হাত থেকে জনগণের কেনা পয়সার বুলেট জনগণের বুকে বিধেঁছে। আমরা আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো দায়িত্বে দেখতে চাই না। কথা এক দম সাফ। এখানে কোনো দানাই ফানাই নেই। তিনি প্রশাসনের যে পর্যায়ে থাকুক না কেন? প্রশাসনের সৎ ও দেশ প্রেমিক যারা আছেন,তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশবাসী কাজ করবে ইনশাল্লাহ্। জুলাই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তাবায়নে জামায়াতের আপসহীন লড়াই চলবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, খুনিদের বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে সংস্কার সাধন করতে হবে। তারপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ তিনটি জনগণের দাবি। যতটুকু সময় পান, কিছু কাজ তো আপনাদেরও করতে হবে। দৈনন্দিনের কিছু কাজ ও উন্নয়নের কিছু কাজ। আপনার আবার যেন নতুন করে কোন বেইনসাফী না করেন। ইনসাফের ভিত্তিত্বে করবেন। ২৪ এর গণহত্যায় অনেক মানুষ জীবন দিলো। অনেক লাশ গুম করে ফেলেছে। আমার সেসব লাশের সন্ধান এখনো পাইনি। ঢাকার সাভারের আশুলিয়া ট্রাক সারিবদ্ধ লাশ ছুড়ে মারা হয়েছে ট্রাকের ওপর। ছিটকে দেওয়া হয়েছে লাশের ওপর পেট্রল। ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। বানিয়ে ফেলা হয়েছে ছাই। এদের কোথায় খুঁজে পাবো। ৩ আর ৪ আগস্ট দুই দিন ইন্টারনেট বন্ধ করে মানুষকে মেরে লাশগুলো গুম করে ফেলা হয়েছিল। আজকে যেখানেই যাই সন্তান হারা, স্বামী হারা, পিতাহারা পরিবারের আহাজারি শুনতে পাই।
৫ তারিখের পর নরসিংদীতে এখন আর কেউ চাঁদাবাজি করে কিনা জানতে চায় জামায়েতে ইসলামীর আমির। চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু একজন পানের দোকানদারকে বলা হয় সকালের খাজনা দিয়ে ব্যবসা করবা। অসহায় মানুষ ভিক্ষার বাটি হাতে নিয়ে বসে। তারা বলে এখানে ভিক্ষা করতে হলে খাজনা দিতে হবে। এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা। জনে জনে চাঁদা। অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আপনি একটি বাড়ি বানাবেন-দেখবেন- মানবরূপী দানবরা এসে হাজির হয়ে বলবেন, চাচা বা বড় ভাই বাড়ি বানান অসুবিধা নেই। আমাদের খেয়াল রাখবেন। আমাদের সন্তানেরা কি এ জন্য জীবন দিয়েছিল? তোমরা যারা শহীদ হয়ে জাতিকে ঋণ করেছো। আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে তোমাদের কথা দিচ্ছি তোমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আমাদের আপসহীন লড়াই চলবে। এ সমাজ থেকে চাঁদাবাজি দুর্নীতি দুঃশাসন যতক্ষণ পর্যন্ত বিদায় না নেবে। ততক্ষণ আমারদের লড়াই চলবে।
জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব কয়টি কার্যালয় কার্যত সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা নিবন্ধন এখনো ফিরে পাইনি। নিবন্ধনের জন্য এখনো আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। অন্যায়ের কাছে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত না করার কারণে কেড়ে নেওয়া নিবন্ধন ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি অবিলম্বে প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে। এছাড়া দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশে বিদেশে যেখানেই থাকুক জাল ফেলে ফিরিয়ে এনে সরকারি কোষাগারে জমা করার দাবি করেন জামায়াতের আমির।
গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার এবং বৈষম্যহীন-ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নরসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মো. মোছলেহুদ্দীন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মাহানগর আমির আব্দুল জব্বার, জেলা শাখার সেক্রেটারী আমজাদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
জেএইচ