ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে, দাফন দিল্লিতে: সালাহ উদ্দিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
আ. লীগের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে, দাফন দিল্লিতে: সালাহ উদ্দিন জনসভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে আর দাফন করা হয়েছে ভারতের দিল্লিতে। শেখ মুজিব ও হাসিনার আওয়ামী লীগ এদেশে আর রাজনীতি করার অধিকার নেই।

তারা নিজেরা রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। খুন, গুম আর দেশের গণতন্ত্র নষ্ট করে শেষ করে দিছে জনগণকে। হাসিনা এখন বিশ্ব খুনি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক সেটা সর্বদক্ষিণের মানুষ চাই।  

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ইঙ্গিত করে বলেন, সংস্কার বলে সময় ক্ষেপণ করবেন না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। এখনো আমলা-পুলিশ প্রশাসনে ফ্যাসিস্টের যেসব দোসর রয়েছে তাদের বিতাড়িত করেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করুন।

তিনি লবণশিল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, লবণ চাষিদের সাথে নিমক হারামি করবেন না। কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দিয়ে পুরো দেশের মানুষ চলতে পারে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানির দরকার নেই।  
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে সাবেক ওই মন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের আগেই দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কিছু উপদেষ্টা জনগণের পালস বুঝে না। তাদের নসিহত করুন, অথবা বিদায় দিন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণঅভ্যুত্থানের স্পিড অনুযায়ী নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করুন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে নজর দিন। পতিত হাসিনার দোসরদের অস্থিরতার অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করুন।  

সালা হউদ্দিন আহমদ বলেন, অনুপাত-অনুপাত নির্বাচন যারা চান, তাদের রাজনৈতিক অনুপাতের জ্ঞান নেই। স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসাবেন না। এদেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে। বৈষম্যহীন জ্ঞানলদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ছাত্র-জনতা ম্যান্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এজন্য ভোটবিহীন এইদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুতরাং জাতীয় সংসদেই নির্ধারিত হবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র রক্ষার সব কর্ম।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় কক্সবাজার গোলচত্বর মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত, অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

জনসভায় সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান রাজনৈতিক মৃত্যুবরণ করেন। আর ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই নিজের কবর রচনা করেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে, আওয়ামী লীগের দাফনকার্য সম্পন্ন করে। এখন আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। মুর্দা হাসিনা কাফন পরে কথা বলছে দিল্লিতে বসে। পতিত ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা হাসিনা নতুন বাংলাদেশে কাফন পরে কথা বলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এদেশে মুর্দার কথা বলা জায়েজ নেই।  

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী শব্দ। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা এদেশে রাজনীতি করেনি। করেছে-সংসদীয় একনায়ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, গুম,লুটপাট। যার কারণে শেখ হাসিনা এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত, বিশ্ব স্বীকৃত একজন খুনি।

বিএনপির ওই নীতি-নির্ধারণী বলেন, শহীদ জিয়া এদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছেন। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিতাড়নের মধ্য দিয়ে পুনঃ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাবেক এমপি আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সহ-সভাপতি এনামুল হক, মমতাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নুরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান ছিদ্দিকী, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ রফিকুল হুদা চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাওহীদুল আনোয়ার, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন আফসেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।