ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ডেসটিনি প্রধানের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে ইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৫
‘ডেসটিনি প্রধানের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে ইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে’

ঢাকা: ‘আমার টাকা মেরে দিছে। পাঁচ লাখ টাকা পাব সমিতি থেকে।

কেবল আমি নই, আমার মতো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের টাকা মেরে দেওয়া একটা লোক রাজনৈতিক দল গঠন করে কীভাবে? আর কী করেই বা নিবন্ধন পায়!’ কথাগুলো বলছিলেন ডেসটিনি-২০০০ এর সদস্য মো. সাইফ উদ্দিন, যিনি ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডেরও সদস্য।

ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) গঠনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতিবাদ জানাতে এসে এসব কথা বলেন ওই ভুক্তভোগী।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনের পর আরেক ভুক্তভোগী মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমাদের টাকা মেরে দিয়ে একজন লোক দল গঠন করেছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেছেন। গরিবের টাকা মেরে দিয়ে অভিজাত হোটেলে দল ঘোষণা দিয়েছেন, এগুলো কী দেখার কেউ নেই? তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি—এই দলকে যেন নিবন্ধন দেওয়া না হয়। এতে নির্বাচন কমিশনের দুর্নাম হবে।

রফিকুল আমীনের দলটি আত্মপ্রকাশেরর পরপরই বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ইসিতে নিবন্ধন সংক্রান্ত আবেদন নিয়ে আসে। নবগঠিত দলটির সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনিম বলেন, আজকে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আমাদের দল আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য নতুন দলের আবেদন নেবে ইসি। তাই আমরা তিন মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি। এদিকে ডেসটিনির অন্য এক ভুক্তভোগী মুহিবুব জামান বলেন, আমি ১০ হাজার টাকার গাছ কিনেছিলাম। তারপর আর কোনো আপডেট পাইনি। এখন সেই কোম্পানিও নেই, গাছেরও কোনো খোঁজ নেই। আমি আমার টাকা মুনাফাসহ ফেরত চাই। শুধু আমি নই, আমার মতো যারা আছেন, তাদের টাকা ফেরত না দিয়ে যেন নির্বাচন কমিশন রফিকুল আমীনের দলকে নিবন্ধন না দেয়। তিনি বলেন, যেই ব্যক্তি তার সহকর্মীদের অংশীদ্বারত্ব নিয়ে বাটপারি করেছে, আমানত রক্ষা করতে পারেনি, তার হাতে দেশেকে কী করে আমানত হিসেবে দেওয়া যাবে? এই দল নিবন্ধন পেলে স্বাধীন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।

ডেসটিনি বাংলাদেশের একটি আলোচিত প্রতিষ্ঠান, যার বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা মেরে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন অর্থপাচার ও ‘ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন’ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দুটি মামলায় দীর্ঘ সময় কারাভোগ করেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড পণ্যগুলো এমএলএম পদ্ধতিতে সরাসরি বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করত। এই পদ্ধতির ব্যবসার মাধ্যমে কোম্পানিটি চার হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার করে বলে সে সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা মামলায় রফিকুল আমীনকে কারাভোগ করতে হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশে ডেসটিনির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব স্থবির করে রাখা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে গড়া নতুন দলটিকে নিবন্ধন না দিতে আবেদন জানিয়েছে আরেকটি রাজনৈতিক দল ‘আম জনতার দল’। দলটির একটি প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে ইসিতে এসে লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছে। আম জনতা দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান বলেন, আম জনতার দল- হচ্ছে আমাদের দল, যেই দল নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এখন একজন ব্যক্তি নামের একটি অংশ ‘আ’ শব্দটি আমাদের দলের নামের পূর্বে বসিয়ে দিয়ে নিবন্ধন চাচ্ছেন। এটি হতে পারে না। তাই আমাদের দলের নামের মতো কোনো নামের দলকে যেন নিবন্ধন না দেয়, আমরা সেই আবেদন জানিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৫
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ