ঢাকা: নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এ ছাড়া এনসিপির পক্ষ থেকে থেকে উপস্থিত ছিলেন- দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসেল।
বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে সংবিধানে মূলনীতির মাধ্যমে দলীয় রাজনৈতিক অবস্থানকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সংবিধানের মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা, সেই প্রশ্ন রেখেছি। তবে আমরা বলেছি বাহাত্তরের মূলনীতি এবং পরে সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে যে দলীয় মূলনীতিগুলো প্রবেশ করানো হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। সংবিধানে প্রত্যেক জাতিসত্তার স্বীকৃতি এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। মৌলিক অধিকার আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য করতে হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে ক্ষমতার ভারসাম্য, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, নারীর ক্ষমতায়ন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা যে মতামত দিয়েছিলাম, সেই বিষয়ে আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা প্রথম ধাপের আলোচনা করেছি। আমাদের আলোচনা সম্পূর্ণ হয়নি। সুপারিশ ও মতামতের বাইরেও আজ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা চলমান থাকবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা আজকের আলোচনাতে ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছি। আমাদের সংবিধানে এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে সাংবিধানিক নিয়োগগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি সেটি নিয়ে কথা বলেছি। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম, নারীর ক্ষমতায়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আমাদের আলোচনা ছিল। সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি, দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে পারবে না। যিনি একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি পরে রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার নয়, বরং মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রস্তাবনা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) ফরমেশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইন সভার ক্ষেত্রে আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভাকে সমর্থন করেছি। উচ্চ কক্ষ হতে হবে ভোটের আনুপাতিক, আসনের আনুপাতিক নয়। নির্বাচনের আগেই উচ্চ কক্ষ প্রার্থী ঘোষণা দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। আমরা ১০০ আসনে নারী প্রার্থী প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিযোগিতা করে সংসদে যাবে, এই প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেছি। কিন্তু এটার পদ্ধতি কী সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই আলোচনা চলমান আছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট করা লাগবে। উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ হওয়ার পরও গণভোটে যেতে হবে। আমরা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাবনা এসেছে। বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করা, আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া, বিভাগীয় বেঞ্চ তৈরি করা এবং জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা এবং সেক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষের মতামত নেওয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর বলেছি। ভোটারের বয়স ১৬ বছর বলেছি। ডেপুটি স্পিকার আমরা একজন বলেছি, সেটা বিরোধী দল থেকে হবে। এ ছাড়া আমরা বিতর্কিত ৭০ এর অনুচ্ছেদের সংস্কারের কথা বলেছি। স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে আমরা নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো না দেওয়া নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া দুদক, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
এসসি/আরবি