ঢাকা, বুধবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চায় বিএনপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চায় বিএনপি জাতীয় সংসদের এলডি হলের বৈঠক মধ্যবর্তী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চায় বিএনপি। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দিনের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলের বৈঠক মধ্যবর্তী ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা আমরা বলেছি। যেখানে রাষ্ট্রপতির হাতে কি কি ক্ষমতা অর্পণ করা যায়; প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতি কি কি করতে পারবেন সেটা বিস্তারিত থাকবে। এটা এই মুহূর্তে আমরা উন্মোচন করছি না।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদের ক্ষেত্রে একটি বিতর্ক আছে। সেটা নিয়ে উনারা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সেটি আমরা ফরমালি পাইনি। আমাদের দলের অবস্থান, পর পর দুই বারের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। অর্থাৎ, গ্যাপ দিয়ে তারপর আবার হতে পারবেন।

এখানে আমাদের যুক্তি হলো- যদি আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে কাজ করতে দিই এবং যদি কেয়ারটেকার সরকার ইনপ্লেস হয় তাহলে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। সেই চর্চার মধ্য দিয়ে যদি জনগণ একটি দলকে বারবার চায়, তার মানে জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সেই পার্টির স্বাধীনতা থাকা উচিত কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার মানে এই নয়, সব সময় একই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা পার্টির স্বাধীনতা, যারা মেজরিটি হবে সংসদে।

তিনি আরও বলেন, একজন ব্যক্তি যাতে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা পদে না থাকেন সেটি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখানে যে মেজরিটি পার্টি সংসদে সংসদীয় দল হয়, সেই পার্টি সিদ্ধান্ত নেয়, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা জরুরি নয়, পার্টির প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেন। এমন উদাহরণ আছে। কিন্তু হওয়ার অপশন রাখা উচিত। আর প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনিই সংসদ নেতা হবেন। এটা ট্র্যাডিশন। কোনো কোনো দেশ সংসদ নেতাকে আলাদা করেছে, এমন নজির আছে। কিন্তু এখানে সংসদ নেতার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। এখানে সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী অনেকটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা প্রধানমন্ত্রীর মতো আলাদা পোস্ট নয়। কয়েকটা জায়গায় শুধু সংসদ নেতার উল্লেখ আছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১৪ জন হবে, এর সঙ্গে একমত। উপদেষ্টামণ্ডলীর কার্যাবলী রুটিন ওয়ার্কের ক্ষেত্রে একমত। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য থেকে একজনকে মনোনীত করা হবে, সেই বিষয়ে একমত। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একমত। স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হবে না, এই ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ একমত।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা মোটামুটি একমত। তবে এটা আরও বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বলতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগসহ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং ঢালাওভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে একটি প্রোভেশন রাখি হঠাৎ করে, তাহলে ইমব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে। সেজন্য এটা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। একটি জিনিসে ঐক্যমত্যে আসা যায়। কিন্তু যেটা রাষ্ট্রের বিষয়, সংবিধানের বিষয়, রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয় সেটা গভীরভাবে চিন্তা করে সংবিধানে আনতে হবে।

বিএনপি এই নেতা আরও বলেন, আইনসভার ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, আমরা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে একমত। উনারা এটার নাম রেখেছেন উচ্চ কক্ষের জন্য সিনেট, নিম্ন কক্ষের নাম জাতীয় সংসদ। এটাতে আমরা একমত। নিম্ন কক্ষের ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এটা নিয়ে আমরা একমত। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আমাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে।

ভবিষ্যতে যাতে বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হতে পারে সেজন্য আপিল বিভাগের সিনিয়র মোস্ট বিচারপতিদের মধ্যে অন্তত দুই-তিনজনের মধ্য থেকে নিয়োগের পক্ষে বিএনপি। এই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছ বিচার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি। উনাদের প্রস্তাব ছিল, আপিল বিভাগের সিনিয়র মোস্ট যেন পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি হন। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, রাষ্ট্রের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি আগে দেখা গেছে। সর্বক্ষেত্রে আমরা যদি নির্দিষ্ট করে দিই, কোনো বিকল্প না থাকলে, ভবিষ্যতে যেহেতু আমরা বিচারবিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে চাই, সেক্ষেত্রে আগের মতো কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি হন, এটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না।

সালাহউদ্দীন আরও বলেন, এখানে একটা অন্তত বিকল্প থাকা উচিত, আপিল বিভাগের সিনিয়র মোস্ট বিচারপতিদের মধ্যে অন্তত দুই-তিনজন এ অপশনে থাকে। সেই জায়গাটা এখনো গৃহীত হয়নি। এখনো আলোচনা চলছে। নেসেসিটি মেকস ল। আমাদের কাছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। ডকট্রিন অব নেসেসিটি বিবেচনা রেখেই কিছু অপশন রাখা সুবিধা। না হলে রাষ্ট্র এমন কোনো ব্যক্তির হাতে পড়ে যাবে, যা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না। মন্ত্রী পরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে পরিচালিত। কিন্তু উনারা বলেছেন, কালেকটিভলি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা কর্তৃক পরিচালিত। তাতে এখানে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকে না। আমরা বলেছ প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকা উচিত।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকের ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।