ঢাকা, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৪ মে ২০২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকারের কাজে সন্তুষ্ট না হলেও সহযোগিতা করবে এনসিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩০, মে ২৪, ২০২৫
সরকারের কাজে সন্তুষ্ট না হলেও সহযোগিতা করবে এনসিপি ছবি: শাকিল আহমেদ 

ঢাকা: আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতিতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সরকারকে দলটি সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।

সরকারের কাজে সন্তুষ্ট কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও সংস্কার বিষয়ে যে গতিতে কার্যক্রম চলছে, আমরা (এনসিপি) তাতে সন্তুষ্ট নই। এ নিয়ে আমাদের সমালোচনা রয়েছে, তবে সহযোগিতাও রয়েছে। আমরা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে রাজপথে আছি, সরকারকে চাপও দিচ্ছি, তবে সেটি দেশ ও জনগণের স্বার্থে। সরকারকে আমরা বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা চাই, কোনো পক্ষই সরকারের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়াক। সমালোচনা হোক, সহযোগিতাও হোক-সরকার যেন কাজের গতি বাড়ায় এবং জনগণের সামনে তা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বারবার অনৈক্য ও বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশবিরোধী নানা শক্তি। ফলে বাংলাদেশকে কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পরেও সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে, আওয়ামী লীগও নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। বাংলাদেশের এই অনৈক্যের পেছনে মূলত আওয়ামী লীগই দায়ী, কারণ তারা চায় না এই ঐক্য টিকে থাকুক। ফলে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে হলে ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধান চাই। সেটার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন চাই। মৌলিক সংস্কারের জন্য আমরা ‘জুলাই সনদ’ চাই, আমরা বিচার চাই। কিন্তু বিএনপি শুধু নির্বাচনের কথাই বলেছে। একটি জাতীয় নির্বাচনই গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা নয়। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম চাওয়া, কিন্তু একমাত্র নয়। রাজনৈতিক মতামত, ভিন্নমত, আদর্শ থাকতেই পারে; কিন্তু দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমাদের ঐক্যের জায়গায় যেতে হবে—আমরা এটা বিশ্বাস করি। আমরা যে কোনো সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত।  

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তিনি বলেন, যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল-আদালত, এনবিআর, যমুনা-এই প্রেক্ষাপটে তিনি মনে করছেন, তাকে জিম্মি করে দাবি আদায় সম্ভব নয়। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু বিচার ও সংস্কারের কাজগুলো যদি তিনি করতে না পারেন, তাহলে ওনার দায়িত্ব পালনের যৌক্তিকতা থাকে না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে তার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তিনি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে আমরা বলেছি, তাকে দায়িত্বে থাকতে হবে। জনগণের কাছে তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই তিনি যেন রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধান করেন এবং সব দলকে ঐক্যের দিকে আহ্বান জানান।  

তিনি বলেন, এক-এগারোর বন্দোবস্ত মানে ছিল সেনাসমর্থিত ও বিদেশি প্রভাবের একটি সরকার, যা গণতন্ত্রবিরোধী। আমরা ৫ আগস্ট থেকে বলে আসছি, গণঅভ্যুত্থনের সমর্থনে জনগণের সরকার হতে হবে, যারা গণতন্ত্র ও সংস্কার নিশ্চিত করবে। সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাদের কাজ নয়।  
তিনি আরও বলেন, আমরা গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন চাই, যেটা নতুন সংবিধান ও রাজনৈতিক ট্রানজিশন নিশ্চিত করবে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার নিয়ে আদালতের রায় এবং তা ঘিরে আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ডিসেম্বর-জুন টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য, আমরা সেটি সমর্থন করি। তবে তার আগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।  

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমরা বলছি, মানবিক করিডোরের বিষয়ে যেন কোনো ধোঁয়াশা না থাকে। সরকার আগে দুটি ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। পরে পরিস্কার করেছে যে, এটি ত্রাণ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা হতে পারে। তবে ত্রাণ কার হাতে থাকবে, কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কোনো হুমকি যাতে তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যেন দায়িত্বশীলভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, এই সরকার বিচার, সংস্কার ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিশ্চিত করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হোক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই সরকারকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার প্রয়োজন নেই, তাদের দায়িত্ব হলো কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করা।  

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, এবং মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।

এসসি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।