ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, রোডম্যাপ চেয়েছিলাম এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, এখন পর্যন্ত চাচ্ছি না। উনার কাছে আমরা নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দাবি করেছি।
শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘শাপলা চত্বরে: শাহাদতের রক্তে রাঙা অবিনাশী চেতনা’ শীর্ষক কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে বুঝতে পারছি যে এই সরকারকে নানাভাবে ভুল বোঝানো হচ্ছে আমাদের বিষয়ে, আমরা এই সরকারকে কাজ করতে দিতে চাচ্ছি না। এটা সঠিক নয়। আমরা বলেছি এ দেশের সেনাবাহিনীকে যেন বিতর্কিত না করা হয়। আমরা বলেছি এ দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেন কোনো প্রকার ছেলে খেলা না করা হয়। এ দেশের নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেকোনো বিষয়ে যেন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এই কথাগুলোই আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, শাপলা চত্বরে যে গণহত্যা হয়েছিল সেদিন আমি আর মাহমুদুর রহমান ভাই দুজনই জেলে ছিলাম। সেদিন দুজনই পিজি হাসপাতালে ছিলাম। সে সময় মাহমুদুর রহমান ভাই সাতদিন ধরে অনশন করছিলেন। আমি তখন ভাইকে বলেছিলাম অনশন করে লাভ নেই। আপনি মারা গেলে হাসিনা খুশি হবে। কোনো সময় জেলখানায়, কোনো সময় আয়না ঘরে, আবার কোনো সময় মৃত্যু গহ্বরে আমার নিজেরই সময় কেটেছে দীর্ঘ ১৬ বছর। শাপলা চত্বরে শহীদদের বিচার দেখার জন্য আল্লাহ যেন আমাকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বলতে চাই, আপনারা এখন পর্যন্ত একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারলেন না শহীদদের। শাপলা চত্বরে শহীদদের তালিকা হেফাজতের পক্ষ থেকে কেন করছেন না। প্রতিটি শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আপনারা নিজেরা করুন। আর সেখানে প্রত্যেক শহীদের নাম-ছবিসহ যেন উল্লেখ করা থাকে। তাহলেই এ দেশের মানুষ তাদের চিরকাল স্মরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা এমন জঘন্য হত্যাকারী যে সে রাতের অন্ধকারে সমস্ত আলো নিভিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এত পরিমাণ নিরীহ আলেমদের হত্যা করলো তারপরও ফ্যাসিস্ট হাসিনা তাদের নিয়ে তার আমলে তামাশা করে গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাজনৈতিক এবং দলীয় সিদ্ধান্তে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। আসমান থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে এদেশের নিরীহ শিশু, নারীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে খুনি হাসিনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এরপরও বাংলাদেশের সব হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ন্যূনতম অনুশোচনা বোধ করে না। দোষ স্বীকার করেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু এসব না করে উলটো এ দেশের গণঅভ্যুত্থানকারীদের তারা দোষী বলে দাবি করছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন যেই অবস্থায় আছি তাতে যদি আমরা সব শহীদদের বিচার চাই তাহলে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো আরও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তা নাহলে দ্রুত এই বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাবে না। তবে বর্তমান ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত কোনো বিচারকার্য দৃশ্যমান নয়। তবে আমরা আশা করবো, বিচারকার্য যেহেতু সময় সাপেক্ষ, তবুও খুনি হাসিনার আমলে সংগঠিত একটি মামলা হলেও যেন বিচারকার্য শেষ হয়েছে এটা যেন আমরা দেখে যেতে পারি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশিরউল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আহমেদ, মাওলানা রুহুল আমিন সালেহসহ শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
ইএসএস/আরবি