ঢাকা: যে রাজনৈতিক দল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে, তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাস-গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে রাজনৈতিক দল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে, তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আগামীর রাজনীতি আগের মতো হবে না। আগামীর রাজনীতি হতে হবে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। যে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল এটা বুঝবে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। যে পরিবর্তনের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে, সেটি যদি আগামীর রাজনীতি দিতে না পারে, সে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের কোনো ভবিষ্যৎ আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এক হাজার সংস্কার করেও কোনো লাভ হবে না, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়। সংস্কারের প্রথম ধাপই হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের পেছনে যে শক্তিগুলো ছিল, তার মধ্যে প্রথম শক্তি ছাত্র-জনতার সমর্থন, দ্বিতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন এবং তৃতীয় শক্তি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী। এছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পেছনেও এই তিনটি শক্তি কাজ করেছে। সংস্কার হচ্ছে মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ ১০ মাস হয়ে গেছে। আমরা যদি এটি বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে এই তিনটি শক্তির মধ্যে ছাত্র-জনতার অবস্থান কোথায়? কিছুসংখ্যক মানুষ রয়েছে, যারা অব্যাহতভাবে একটি দল গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাকি ছাত্রদের অবস্থান কী?
এরপর তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে বড়। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা দলগুলো আজ কোথায়? তাদের অবস্থান বিবেচনা করা প্রয়োজন। তৃতীয় শক্তি হলো বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী। যেদিন এই সরকার বসানো হয়েছিল, সেদিনের সঙ্গে আজকের অবস্থান তুলনা করলে দেখা যাবে আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি। কোথাও যেন একটি বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এই বিভক্তির দায় কে নেবে? যারা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যেতে চেয়েছিল, সেটা কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে? যারা সমর্থন দিয়েছে, তারা কেন এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে? এর একমাত্র কারণ হলো, যে প্রত্যাশা নিয়ে গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যাওয়া ও যেসব কাজ করা প্রয়োজন ছিল, তা দৃশ্যমান হচ্ছে না।
খসরু আরও বলেন, সংস্কারের বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। সবাই সংস্কারের কথা বলছে। ড. ইউনূস শুরু থেকেই বলছেন, যেখানে ঐকমত্য হবে, সেখানেই সংস্কার হবে। সংস্কারপত্র জমা দেওয়ার পরেও কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তা জাতিকে জানানো হচ্ছে না কেন? এটি রহস্যজনক। আমরা সেদিনও এ প্রশ্ন তুলেছিলাম। যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে যেটুকু হয়েছে, সেটিই বাস্তবায়ন করা উচিত।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস বলেছেন, বেশি হলে জুন, কম হলে ডিসেম্বর। বেশি-কমের বিষয়টি কেন? ঐকমত্যই তো মূল বিষয়। কারা নির্ধারণ করবে কোনটা বেশি আর কোনটা কম? আমি মনে করি, কেউ যদি বলে কমের মধ্যে সমাধান চাই, সেটিও ভালো। বেশি হলেও সমাধান আছে, কম হলেও সমাধান আছে। কিন্তু ঐকমত্য ছাড়া কোনো সমাধান নয়। প্রত্যেকটি দলই প্রস্তুত আছে, ঐকমত্য কোথায় তা জানার জন্য এবং সনদ সই করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। বিচারের বিষয়েও কোনো সমস্যা নেই। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি। আমরা বিচার চাই, তবে সেটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে, শেখ হাসিনার মতো নয়।
তিনি আরও বলেন, "সংস্কারের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই, বিচারের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই। তাহলে রোডম্যাপ দিতে ভয় কেন? নির্বাচন নিয়ে ভয় কেন? যারা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তাদের নির্বাচন নিয়ে ভয় থাকে। গণতান্ত্রিক অর্ডারের ওপর আস্থা না থাকলেই এই ভয়। বিভক্তি তৈরি হয়েছে গণতন্ত্র চাওয়াদের মধ্যে এবং শেখ হাসিনার পথে চলা গোষ্ঠীর মধ্যে। আজ সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচন দিতে ভয়, গণতন্ত্রে ফিরে যেতে দ্বিধা– এগুলো স্ববিরোধী। সংস্কার, বিচার, নির্বাচন– সবই একে অপরের পরিপূরক এবং চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, পাঁচ-দশজন মানুষ নিজেদের বিজ্ঞ মনে করে, তারা জনগণকে বাইরে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার আচরণে কোনো পার্থক্য নেই। গণতন্ত্রের স্পিরিট থেকে সরে গিয়ে অনির্বাচিত সরকারের দিন যত দীর্ঘ হবে, তত বেশি অস্থিতিশীলতা ও অধিকারহীনতা তৈরি হবে। অনির্বাচিত সরকার যত দিন থাকবে, তত বেশি স্বৈরাচারী আচরণ করবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আব্দুন নুর এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব বাবর চৌধুরী। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর হোসেন মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান।
ডিএইচবি/এমজে