বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বের নামে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
গত সোমবার শিবিরের আইন সম্পাদক আরমান হোসেনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, সম্পাদক সাকিবুর রনিসহ বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
বুধবার (৪ জুন) বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ এক যৌথ বিবৃতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আইনি নোটিশ পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতা প্রত্যাশা করেছিল, সব পক্ষ ভিন্নমত সত্ত্বেও একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সহাবস্থানের অলিখিত বিধান মেনে চলবে। আমাদের অনেক দ্বিমত থাকবে কিন্তু তার প্রকাশ হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা-মামলার সংস্কৃতি আর ফেরত আসবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার মধ্য দিয়ে তারা সেই অলিখিত বিধান ভঙ্গ করেছে। ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন পযায়ের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা সেসব হামলায় অংশগ্রহণ করেছেন। ”
ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “শিবিরের এই তৎপরতা আবারো প্রমাণ করে, তারা জুলাই গণঅভ্যূত্থানে সৃষ্ট ঐক্যে ফাটল ধরাতে ভূমিকা পালন করেছে। যেমনটা তাদের পূর্বসূরিরা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গোটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছিল! আমরা দেখেছি, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে থেকে পুষ্টি নিয়েছে। যারা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে প্রকাশ করার সাহস রাখে না, তারা এখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সদা লড়াকু সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের নামে বিষোদগারের ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। শিবিরের এখনকার তৎপরতা বিগত ফ্যাসিবাদের গণবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তাদের পরোক্ষ ইন্ধনে বিভিন্ন ভুঁইফোর ব্যানারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। ”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “’৭১ ও ’২৪ গণশত্রুদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত শাস্তি ও জাতির কাছে ক্ষমা প্রত্যাশা ছাড়া নতুন বাংলাদেশে তাদের কোনো জায়গা হবে না। আমরা আশা করি, ছাত্রশিবির তাদের গুপ্ত সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি এড়িয়ে ছাত্রলীগের দেখানো হামলা ও মামলার মতো নিপীড়নমূলক ঐতিহ্যের অনুসারী না হয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার পথ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের ভ্যানগার্ড ছাত্র ফেডারেশনসহ অপরাপর গণতন্ত্রকামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণার পথ পরিহার করবে। তাদের মনে রাখতে হবে, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের পর হামলা-মামলার পুরানো সংস্কৃতি ছাত্রসমাজ বরদাশত করবে না। ”
এনডি/এমজেএফ