বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এই আলোচনা জোরালো হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও তখন সঙ্গে ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়— তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। তিনি উল্লেখ করেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন— ২০২৬ সালের রমজানের আগে নির্বাচন হলে তা দেশের জন্য ভালো হবে।
জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি এর আগেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
২০২৬ সালে রমজান মাস ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৪৪৭ হিজরির রমজান শুরু হতে পারে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে রমজানের আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইলে ৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি এক ধরনের বোঝাপড়ায় এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই পক্ষের আলোচনায় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে একটি সম্ভাব্য সমঝোতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, বিএনপি তাদের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাওয়ার অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে পারে। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টাও সময় এগিয়ে আনার প্রতি ইচ্ছুক, তবে তা নির্ভর করবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির ওপর। লন্ডনের বৈঠকের বোঝাপড়ার ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকার বিচার ও সংস্কার কাজে বিএনপির তরফ থেকে আরও সহযোগিতা পেতে পারে।
এই বোঝাপড়ার দিকে ইঙ্গিত করে লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান সোহেল তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সমঝোতা হয়ে গেছে লন্ডন বৈঠকে। ’
এ বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলেন, ‘কোনো পক্ষই তারিখ না বললেও নির্বাচন জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে বলে বোঝা গেল...। ’
যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবু এই বৈঠক ও আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হলে, তা হতে পারে দেশের নতুন রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা।
আরএইচ