ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২, ২৭ জুন ২০২৫, ০১ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

ত্রয়োদশ নির্বাচন

মাদারীপুর-১: মাঠে বিএনপির একাধিক নেতা, একক প্রার্থীতে স্বস্তি জামায়াতের 

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫৮, জুন ২৭, ২০২৫
মাদারীপুর-১: মাঠে বিএনপির একাধিক নেতা, একক প্রার্থীতে স্বস্তি জামায়াতের  ওপরে বাঁ থেকে লাবলু, আবু জাফর, কামাল, রোমান, নাদিরা, সারোয়ার, মাওলানা আকরাম হোসাইন

মাদারীপুর: পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ বিধৌত মাদারীপুর জেলার অন্যতম এক উপজেলার নাম শিবচর। ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলাটি মাদারীপুর-১ সংসদীয় আসন।

 

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাদারীপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেতে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।  

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজনকে মাঠে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বলে জানা গেছে।  

এদিকে শিবচর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. সারোয়ার হোসাইন মৃধাকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ফলে তিনিই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও যাচ্ছেন নিয়মিত।  

অন্যদিকে বিএনপি থেকে পাঁচজন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। ভিন্ন ভিন্নভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।  

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা আকরাম হোসাইন।

বিএনপি থেকে যারা আলোচনায় রয়েছেন:
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু জাফর চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও ভাসাবি ফ্যাশনের মালিক কামাল জামান মোল্লা (নুরুদ্দিন মোল্লা), শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী ও জেলা বিএনপির সদস্য নাদিরা চৌধুরী।   

সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু: 
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্দলীয়ভাবে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর। এছাড়া সাবেক কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ জাতীয় দল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ বয়েজ ও ফরাসগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে। বর্তমানে মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।  

মাদারীপুর-১ আসনে লাবলুর জনসমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে। পুরো উপজেলা জুড়ে তার অসংখ্য সমর্থক ও কর্মীরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিয়মিত জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি থেকে মাদারীপুর-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সাজ্জাদ হোসেন লাবলু সিদ্দিকীর পাল্লা ভারী বলেও নেতাকর্মীরা মনে করেন।  

সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।

সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু বলেন, গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইব। দল চাইলে ভোটের মাঠে দেখা হবে। তবে শিবচরে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছি। জনগণের ভালোবাসাই আমার শক্তি।

কামাল জামান মোল্লা (নুরুদ্দিন মোল্লা): 
২০০৮ সালে শিবচরের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে ব্যবসায়ী কামাল জামান মোল্লার। ওই সময় বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-১ আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকা প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এরপর কামাল জামান মোল্লাকে ঘিরে শিবচরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন বাঁক নেয়। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তন হলে অনেক দিন পর তিনি শিবচরে আসেন। বিএনপির সমর্থক ও নতুন-পুরোনো নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপিতে অনেকটা নেতৃত্বশূন্যতা বিরাজ করে। এরপর আর নতুন করে কমিটি গঠন হয়নি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে কামাল জামান মোল্লাকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় বলে তার নেতাকর্মীরা দাবি করেন। তবে এর বিরোধিতা করেন বিএনপির অপর অংশ। এ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।  

এদিকে কামাল জামান মোল্লা ঢাকায় কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। ঢাকা-১৭ আসনেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ ওই আসনে নির্বাচনে অংশ না নিলে কামাল জামান মোল্লা অংশ নিতে পারেন বলেও সূত্রটি জানায়। অন্যথায়, তিনি শিবচরে (মাদারীপুর ১) মনোনয়ন চাইবেন।

ভাসাবি ফ্যাশন ও ভাসাবি জুয়েলার্সসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল। কামাল জামান শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই। শিবচরের রাজনীতিতে তরুণদের একটা অংশ তাকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়।  

কামাল জামান মোল্লার সমর্থক শিবচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান নাসিম বলেন, কামাল জামান মোল্লা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি করছেন। ঢাকায় আমরা অসংখ্য মিটিং-মিছিল করেছি। রাজনৈতিক কারণে তাকে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। তিনি শিবচরের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসনেও বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন। তরুণদের বড় একটা অংশ তাকে চায়।  

নির্বাচন নিয়ে কামাল জামান মোল্লা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। শিবচরে আগামী নির্বাচনে আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। শিবচরের জনগণ আমাকে পেয়ে খুশি। আমি শিবচরবাসীর পাশে সব সময় আছি এবং থাকব। শিবচরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে যাবো।

আবু জাফর মো. হোসেন চৌধুরী: 
সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবুল খায়ের চৌধুরীর (রিজু মিয়া) কনিষ্ঠ ভাই আবু জাফর মো. হোসেন চৌধুরী (জাফর চৌধুরী) ১৯৮৫ সালে বিএনপির রাজনীতির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে জড়ান। এরপর দীর্ঘদিন শিবচর উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে নানাভাবে কোণঠাসা হলেও বিএনপির রাজনীতিতে অবিচল ছিলেন তিনি। আপস করেননি কারও সঙ্গে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এ নেতা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাফর চৌধুরী সম্পর্কে উপজেলার একাধিক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, তিনি শিবচরে বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন সেই ৮০ দশকে। একজন সৎ, শিক্ষিত ও আদর্শ নেতা হিসেবে বিএনপির জন্য কাজ করে গেছেন। নিজের ভাইকেও (সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি যখন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন, তখন শিবচরের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত পরীক্ষিত কর্মীদের নিয়ে আদর্শ কমিটি তৈরি করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিনি কখনোই আপস করেননি। বরং নিজের জায়গা-জমি হারিয়েছেন। এ ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন করা হলে আগামীতে শিবচরে বিএনপি আগের মতো শক্ত অবস্থানে পৌঁছে যাবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে কোনো রকম অভিযোগ দেখিনি।

আবু জাফর চৌধুরী বলেন, এখন রাজনীতির ধারা পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো নেই। তবে যারা প্রকৃত অর্থে বিএনপিকে ভালোবাসে, আমি তাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দলের স্বার্থে সব সময় পাশে রয়েছি। আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইব।

নাদিরা চৌধুরী: 
শিবচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন তার স্ত্রী নাদিরা মিঠু চৌধুরী। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সদস্য। আগামী সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত এলাকাগুলোতে তার একচেটিয়া সমর্থন রয়েছে। এছাড়া বিগত সময়ে বিএনপি থেকে উপজেলা নির্বাচনও করেছেন তিনি।

নাদিরা চৌধুরী বলেন, এখনও তো নির্বাচনের কোনো আলোচনা নেই। আর শিবচরে বিএনপিতে বিভেদ রয়েছে। বিএনপি থেকে যদি কোনো সংসদ সদস্য এ আসনে নির্বাচিত হন, তবেই বহুভাগে বিভক্ত শিবচর বিএনপি এক হতে পারবে। আমি বিএনপির নমিনেশন চাইব। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান: 
প্রায় ১০ বছর ধরে শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আগামী নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এখন উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের দিকেই বেশি মনোযোগী বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদের প্রার্থী হতে পারেন বলেও জানা গেছে।  

ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, যেহেতু আমার দল এখনো নির্বাচন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট কথা বলেনি, তাই প্রার্থী হওয়া না হওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো দল গোছানো। আমরা শিবচরের সুন্দর-গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি উপহার দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আপাতত দল গোছানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।

জামায়াতে ইসলামী
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এর দীর্ঘ ২৯ বছর পর ফের এ আসনে প্রার্থী পেল জামায়াতে ইসলামী। মাদারীপুর-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। শিবচর উপজেলা আমির মো. সারোয়ার হোসাইন মৃধাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী মাঠে দাঁড়াতে পারেনি। শিবচরেও প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ হারিয়েছিল দলটি। ছিল গোপন মিটিং-বৈঠক। গত ৫ আগস্টের পর পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত।  

মো. সারোয়ার হোসাইন:
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি কর্মী হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতের রাজনীতিতে। ১৯৮০ সালে শিবচর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮১ সালে ফরিদপুর শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৩ সালে ঢাকার সূত্রাপুর থানার সভাপতি, ১৯৮৭ সালে রমনা এবং ১৯৮৯ সালে ঢাকা মহানগরীর স্কুল বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন শেষে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে। বর্তমানে তিনি শিবচর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির। প্রথম জীবনে ব্যবসা করতেন। এরপর ১৯৯৯ সাল থেকে তা’লিমুল কুরআন ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। এটিএন বাংলার কুরআন শিক্ষা অনুষ্ঠানের মুয়াল্লিমুল কুরআন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে জিনিয়াস এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তিনি।  

তিনি বলেন, আমি ভোটের মাঠে রয়েছি। একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট চাইতে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। নিয়মিত আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রমই চালাতে পারিনি। এখন মানুষের কাছে যাচ্ছি। শিবচরের সাধারণ ভোটাররাও আমাদের নিয়ে আশাবাদী। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিবচরে আমাদের সমর্থন বেড়েছে। নির্বাচন যখনই হোক, আমরা ভোটের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) 
দলটির শিবচর উপজেলা সংগঠক সূত্রে জানা গেছে, এক ঝাঁক তরুণকে নিয়ে শিবচরে এনসিপির কার্যক্রম চলছে। দলের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন এবং সাধারণ মানুষের কাছে দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পৌঁছে দিতে কাজ চলছে। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এক হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে নতুন এ দলটির। এর মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ৭৫ ভাগ সদস্যের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর। বাকিদের বয়স ৩৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। তবে মানুষের আগ্রহ রয়েছে দলটির প্রতি।  

এনসিপির শিবচর উপজেলার সংগঠক মো. রিয়াজ রহমান জানান, এখন মূল লক্ষ্য একটি কমিটি গঠন। আগামী জুনের আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। থানা কমিটি গঠন করার পরে ইউনিয়ন/মাঠ পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে।  

তিনি আরও বলেন, এনসিপি আগামী নির্বাচনের আগে শিবচরে একজন শক্তিশালী, সর্বজন সমাদৃত প্রার্থী খুঁজে বের করবে। এ কাজও চলছে। এরই মধ্যে আমরা কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। তবে এনসিপি এ উপজেলায় প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দেখাবে আশা করি।

সম্প্রতি শাপলা, কলম কিংবা মোবাইল প্রতীক চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।  তারাও দ্রুত জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে।  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
গত ৫ আগস্টের পর শিবচরে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে দলটি। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শিবচরে একাধিক সভাও করেছে দলটি। এছাড়া কমিটি গঠন নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে চরমোনাই পীরের ভক্তরা দলটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাদারীপুর-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। হাতপাখার মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আকরাম হোসাইন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন এ আসনটি ধরে রেখেছিল। বিগত সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো স্বাভাবিকভাবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম তেমন পরিচালনা করতে পারেনি এ আসনটিতে। তবে জনদাবির মুখে সদ্য আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে প্রথমবারের মতো নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছে দলটি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর দলটির সেই সময়ের এমপি-মন্ত্রী আর শীর্ষ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই হয় আত্মগোপন করেছেন না হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হামলা ও নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগসহ নানা অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় কারান্তরীণ আছেন অনেকে।  

দৃশ্যপট বদলে যাওয়ায় এখন মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। এখনো সরকার সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলেও ভোট মাথায় রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা।  

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রচার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যতটা না ভোটের বিষয়, তার চেয়ে দলের কাছে নিজের অবস্থান শক্ত করতেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের যত ব্যস্ততা।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ