ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২, ২৯ জুন ২০২৫, ০৩ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই, নইলে গণভোট: চরমোনাই পীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১৫, জুন ২৮, ২০২৫
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই, নইলে গণভোট: চরমোনাই পীর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) সমাবেশে বক্তব্য দেন। ছবি: শাকিল আহমেদ

রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের মতো বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হতে না পারলে সরকারকে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)।  

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।


  
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, স্বৈরাচার তৈরির রাস্তা খোলা রাখা যাবে না। সংস্কার না করেই নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র।

পিআর পদ্ধতির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেন-জির দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি।  

মৌলিক সংস্কার নিয়ে কেউ কেউ গড়িমসি করছে অভিযোগ করে চরমোনাই পীর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করা। ৫৪ বছরের জমা হওয়া জঞ্জাল দূর করা। আমরা লক্ষ্য করছি, মৌলিক সংস্কারে কেউ কেউ গড়িমসি করছেন। এটা জুলাইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

১৯৭২ সালের সংবিধানকে গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিল না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয় নাই। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা সংস্কারের প্রশ্নে অটল-অবিচল ও আপোষহীন অবস্থান নিয়েছি।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কোনো ক্ষমা নেই মন্তব্য করে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, শুরু থেকেই ইসলামপন্থী সব ভোট এক বাক্সে আনার কথা বলে আসছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও এক বাক্স নীতিতে আসতে পারে, ইনশাআল্লাহ। যদি আমরা একত্রে নির্বাচন করতে পারি, যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে ইনশাআল্লাহ।

রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোন পরিবর্তন হয়নি। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, কারও নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, তোমাদের জীবনের প্রথম ভোট হোক সত্যের পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে, ইসলামের বাক্সে। যদি তোমরা এটা করতে পারো, এ দেশকে আমরা গড়ে তুলবোই ইনশাআল্লাহ। আমাদের কেউ দমাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন, অনেক সময় দিয়েছেন। অনেকে রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। আপনাদের কুরবানির বদৌলতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ গণমানুষের শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এখন সময় ফসল ঘরে তোলার। সুতরাং মহাসমাবেশ থেকে ফিরে গিয়েই কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় করুন। গ্রাম-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করুন। সব ভোটারের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিন।

সরকারের উদ্দেশ্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল। এত জনসমর্থন নিয়ে আর কোনো সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সরকারকে বলব সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন।

বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের অংশগ্রহণ 
সমাবেশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন।

ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রর সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা জালাল উদ্দীন, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।

ইএসএস/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।