পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা গণদাবি আদায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তাহের বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের বৈধতার উৎস এবং ভিত্তি হলো সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এ থাকা জনগণের অভিপ্রায়।
তিনি বলেন, সংবিধানের ত্রুটি ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত অব্যবস্থার সুযোগে কর্তৃত্ববাদী শাসন, ভিন্নমত দমন, দুর্নীতি ও দলীয়করণের ফলে গোটা দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে রাষ্ট্রের সব বিভাগের সংস্কার অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সব পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করে। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে নেওয়া হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে দুই-একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, সরকার এরইমধ্যে জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছ। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে উপস্থাপন করে।
নায়েবে আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ডকট্রিন অব নেসেসিটি হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া ছাড়া ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি।
তাহের বলেন, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, জনগণের দাবি কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি পালন করা হবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সকল জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে মূল বাধা কী- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশন তো খুবই শক্তিশালী। একটি হলো রাজনৈতিক, আরেকটি আইনি বিষয়। রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে আইনগত বিষয়েও সমাধান হচ্ছে না। সুতরাং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হলে দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব। দুঃখজনক যে, আমরা এখনো ঐকমত্য হতে পারিনি। যে কারণে দেরি হচ্ছে। তবে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দাবিগুলো আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই বাস্তাবায়ন হবে। আমরা তো বলিনি যে নির্বাচনে যাব না। আমরা মনে করি, আরও ৫ মাস সময় আছে এই সময়ের মধ্যে সরকার আমাদের দাবিগুলো অবশ্যই মানবে। আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম প্রমুখ।
ইএসএস/আরএইচ