চট্টগ্রাম : পোস্টার, লিফলেট, ব্যানারের ছড়াছড়ি নেই, মাইকের ব্যবহারও সীমিত। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেই প্রচার চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৪১ জন সাংসদের নেতৃত্বে আরও জোরালো প্রচার শুরু হবে বলে দলীয় নেতাদের সূত্রে জানা গেছে। মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদ এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। তবে দলের ডাকসাইটে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে পেয়েও একাই পথ চলছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে আজ নিজ বাসভবনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র সঙ্গে আলাপকালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মহিউদ্দিন চৌধুরী। ৫৩ বছর ধরে চট্টগ্রামে রাজনীতি করছি। চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে চেনে। কারো বগলদাবা হয়ে আমার ভোট চাওয়ার দরকার নেই। ’
পুরো সপ্তাহ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর গণসংযোগ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গণসংযোগে তার সঙ্গী হচ্ছেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেণ্ট বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সাংসদ ইছহাক মিঞা এবং নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন। গত রোববারের গণসংযোগে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ছিলেন মহিউদ্দিনের সঙ্গে। একই দিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল চট্টগ্রামে প্রচার চালালেও মহিউদ্দিন তাদের সঙ্গী হননি।
চট্টগ্রামে অবস্থানকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ জানিয়েছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা এখনো আকাশছোঁয়া। কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ তার পাশে না থাকলেও তি নেই। তিনি নিজেই আমাদের বলেছেন তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের উদ্যোগে প্রচার চালাতে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বৃহত্তর বাকলিয়ার অধিকাংশ অলিগলিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতেগোনা কয়েকটি পোস্টার। পুরো বাকলিয়া জুড়েই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার।
আজ সকাল ১০টার দিকে পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার জ্যোৎস্না শালকরের সামনে লাগানো হচ্ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদুল আলমের পোস্টার। এসময় আওয়ামী লীগ কর্মী মান্নান প্রতিবেদককে জানান, পুরো বাকলিয়ার জন্য কমপে দেড় লাখ পোস্টার লাগবে। অথচ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার পোস্টার। একই অবস্থা নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেও।
এ প্রসঙ্গে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. এমদাদুল হক জানান, ‘নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুযায়ী ৩০ লক্ষ পোস্টার ছাপানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে পোস্টার ছাপিয়ে যতদূর সম্ভব তা বিলি করা হয়েছে।
একই প্রসঙ্গে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গতবারের নির্বাচনেও মীর নাসির পোস্টার লাগিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী ভরিয়ে তুলেছিলেন। তাতে কী লাভ হয়েছে। জনগণই তখন স্লোগান দিয়েছে: ‘দেওয়ালে নাসিরুদ্দিন, হৃদয়ে মহিউদ্দিন। ’
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল আগামীকাল শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে শুরু করবেন। এর মধ্যে সংস্কারপন্থী চার কেন্দ্রীয় নেতাও রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের চট্টগ্রাম সফর কার্যক্রম সমন্বয়কারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা.জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু জানিয়েছেন, আগামীকাল সকালে দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র নেতৃত্বে ৩৫ জন সাংসদ চট্টগ্রামে পৌঁছাবেন। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ নাসিম। চিকিৎসার জন্য আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তিনি প্রচারণার শেষদিনে চট্টগ্রামে আসবেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পংকজ দেবনাথ জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেবেন। কাল থেকে ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১ জন সাংসদের নেতৃত্বে ৪১টি টিম প্রচার চালাবে।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে আজ দুপুরে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন দুই সাংসদ তারানা হালিম ও মমতাজ। তারানা হালিম বিকেলেই নগরীর নন্দনকানন, আন্দরকিল্লা সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গান গেয়ে গেয়ে মহিউদ্দিনের পক্ষে প্রচার চালাবেন। এজন্য তিনটি ট্রাক সাজানো হয়েছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে পংকজ দেবনাথ, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, বলরাম পোদ্দার, বাহাদুর বেপারী, শাহজাদা মহিউদ্দিন আজ সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
এদিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্থদিন পর একমঞ্চে উঠেছিলেন চট্টগ্রামের বিবদমান দুই নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ জ ম নাসিরউদ্দিন চৌধুরী। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বীরউত্তম শাহ আলম মিলনায়তনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থনে বিএম চট্টগ্রাম শাখা ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভায় তারা একমঞ্চে পাশাপাশি বসেন।
উল্লেখ্য, সাংগঠনিক কর্মকান্ড নিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আ জ ম নাছির এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিরোধের জের ধরে এবার মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আ জ ম নাসির মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি মনোনয়ন পত্র জমা না দিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন দেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৫৫ ঘন্টা, ১০ জুন ২০১০
আরডিজি/এএইচএস/জেএম