পুলিশী বাধা ও মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা নামে একটি সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে চট্টগ্রামে সভা করতে পারেননি জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। চট্টগ্রাম মহানগরীর শিবির অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত চন্দনপুরায় সাফা আর্কেড নামে একটি কমিউনিটি সেণ্টারে আজ রোববার দুপুর তিনটায় এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা নামে সংগঠনটি ওই এলাকায় গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ শুরু করলে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
জামায়াত ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দণি জেলা কমিটির মজলিসে শূরা সদস্য সহ দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে এ বৈঠকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। সভা এবং মুজাহিদের উপস্থিতি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রা করে জামায়াত। এমনকি সভার অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবরে গতকাল যে আবেদন করা হয় তাতেও মুজাহিদের উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। নগর জামায়াতের আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গোপনীয়তা রার বিষয়টি স্বীকার করেন।
কিন্তু বেলা ১২টার দিকে এ খবর চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ সরকার সমর্থক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে। দুপুর একটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা সংগঠনের ব্যানারে শত শত নেতাকর্মী নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় জড়ো হয় এবং মিছিল করে চন্দনপুরা এলাকায় গিয়ে সাফা আর্কেডের ৫০ গজ দূরে সমাবেশ শুরু করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশংকায় এসময় ওই এলাকায় চার প্লাটুন সাধারণ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা বিভাগের সহকার কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে দুপুর পৌনে একটার দিকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ চন্দনপুরার অদূরে দেওয়ানজী পুকুর পাড় এলাকায় নগর জামায়াতের অফিসে প্রবেশ করেন। এরপর সেখানে কোতয়ালী থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঢুকে নগর জামায়াত নেতাদের সাফা আর্কেডে সভা করতে না দেয়ার বিষয়টি জানান। এসময় নগর জামায়াতের আমীর শামসুল ইসলাম এমপি সহ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতন্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে জামায়াত অফিসের ভেতর মুজাহিদের উপস্থিতিতে সভা করতে চাইলে পুলিশ বাধা দিয়ে সভা পন্ড করে দেয়। এসময় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সহ অন্যান্য জামায়াত নেতাদের সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলতে দেয়নি পুলিশ।
এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ শেষে বিকেল চারটায় মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা নামক সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিছিল করে জামায়াত অফিসের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উভয়পে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বাধা পেয়ে ওই সংগঠনের নেতাকর্মীরা জামায়াত অফিসের সামনে রাস্তায় আবারও সমাবেশ করেন।
দ্বিতীয় দফা সমাবেশ শেষে মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা সংগঠনের নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার পর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে কড়া পুলিশ প্রহরায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
এর মধ্যে বিকেলে নগর জামায়াতের আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত ইসলামীকে সভা করতে না দিয়ে সরকার একটি বৈধ রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। জামায়াত ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে সংঘাতে না গিয়ে সভা করা থেকে বিরত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় ১৯৭১ সালে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জামায়াত ইসলামী জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ বাংলাদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। একে বিতর্কিত করার অধিকার কারো নেই। ’
তবে এসময় পুলিশ বাধা দিলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আর কথা বলতে পারেননি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্টেণ্ট সেক্রেটারী জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক শাসন নাকি সামরিক শাসন চলছে সেটা বুঝতে পারছিনা। আমাদের অফিসে আমরা সভা করব, সরকার বাধা দেয়ার কে সেটা বুঝতে পারছিনা। ’
জামায়াতের সভায় বাধা দেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-জনতা সংগঠনের অন্যতম সংগঠক ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি এম আর আজিম বলেন, ‘মুজাহিদ একজন গণধিকৃত রাজাকার, আলবদর। ঐতিহাসিক চট্টগ্রামের মাটিতে এ ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীকে সমাবেশ করতে দিয়ে আমরা চট্টগ্রামের মাটিকে কলংকিত করতে চাইনি। ’
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১০