সিলেট: যাই যাই করছে ২০১৪। এরইমধ্যে ঘটে গেছে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা।
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সিলেটের রাজনীতির ময়দানও ছিলো উত্তপ্ত।
এরপর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বেশ উদ্যোমী হয়ে ওঠেন।
তবে নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে বেশ নতুন উদ্যোমে মাঠে নামে বিএনপি। কিন্তু সে অনুযায়ী ফল হয়নি। এরই মধ্যে তৃণমূলে দলকে জোরদার করতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে দল পুর্নগঠনে নামে।
এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট বিএনপি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসে। যদিও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে নানা কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।
সরকার দল আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কমিটিতে পরিবর্তন না এলেও অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জেলা ছাত্রলীগে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।
এদিকে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন হলেও বেড়েছে কোন্দল। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের ফলে বিএনপি ও অংগসংগঠন বছর জুড়েই ছিলো সমালোচিত।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মধ্যে ছিল সীমাবদ্ধ। আর এ ছকেই আবর্ত ছিল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম। তবে দলীয় কর্মসূচির চেয়ে আধিপত্য বিস্তার, দখল ও তদবির বাণিজ্যে ব্যস্ত সময় পার করেছেন নেতারা।
বিশেষ করে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ-রণজিৎ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে সংঘাত লেগেই ছিলো।
এদিকে সড়ক বিভাগের আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের ৬০ কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অতিরিক্ত প্রকৌশলী একিউএম ইকরাম উল্লাহর সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিরুদ্ধে সিলেটে প্রশাসন ও দলে প্রভাব বিস্তারেরও অভিযোগ ওঠে। তার আর্শীবাদ পুষ্ট হওয়ায় সিলেটে একাধিক খুন ও দখলে সমালোচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নামধারী ক্যাডার ইমরান, আফতাব ও বাবুল আহমদ পাঙ্গাস সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
নির্বিঘ্নে চালিয়ে যায় তাদের অপকর্ম। যে কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এই কেন্দ্রীয় নেতার।
অভিযোগ উঠেছে, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর কোটি টাকার বাণিজ্য ধরে রাখতে যুবলীগ ক্যাডার শামীম এবং তার বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। এর জের ধরে গত ২৪ অক্টোবর ওই এলাকায় খুন হন যুবলীগ নেতা আবদুল আলী।
এছাড়া বছর জুড়ে আলোচিত ছিল জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারীসহ জৈন্তাপুরের সারী নদীর বালু উত্তোলনে সাংসদের আধিপত্য।
নানা সমালোচনার পর ৭ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। শাহরিয়ার হোসেন সামাদকে সভাপতি ও রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে প্রায় একযুগ পর নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলে। বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সাঈদ আহমদকে সভাপতি ও রাহাত চৌধুরী মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
একই সঙ্গে নুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদকে সভাপতি ও আবু সালেহ লোকমানকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট মহানগর ছাত্রদলের কমিটিও ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘদিন পর কমিটি গঠন করলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভাজন। যা সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে যায়। যার রেশ এখনও চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রদলের কোন্দলের কারণেই বিএনপির কোনো আন্দোলন সিলেটে সফল হচ্ছে না।
এদিকে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল অ্যাডভোকেট নুরুল হককে আহবায়ক করে সিলেট জেলা বিএনপির ১০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর নেতৃত্বে এই পরিবর্তন আসে।
৮ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে আহবায়ক ও বদরুজ্জামান সেলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন নেতৃত্ব পেয়েও দলকে চাঙ্গা বা রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতারা। যে কারণে এ বছরের ব্যর্থতার গ্লানি আগামী সময়গুলোতেও তাড়া করবে নেতাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪