ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ফিরে দেখা-২০১৪

বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি সরকারি দলকে

শামীম খান, মহিউদ্দিন মাহমুদ ও সালাহ উদ্দিন জসিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি সরকারি দলকে

ঢাকা: বিদায়ী বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার সহিংস চেষ্টা চালায়।

কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

সকল বাধা উপেক্ষা করে নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয় দফা ক্ষমতাসীন হয়ে এক বছর পার করলো সরকার। নানা ঘটনা, সমালোচনা মধ্য দিয়ে বছরটি অতিবাহিত হলেও নির্বাচনের পর তেমন বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি সরকারকে। বারবার আন্দোলনের হুমকি দিয়েও কোনো কর্মসূচি দিয়ে সফল হতে পারেনি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো।

তবে বিরোধীদলের জোরালো আন্দোলনের মুখে না পড়লেও অভ্যন্তরীণ কিছু দলীয় ঘটনা ও অঘটনের কারণে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় সরকার ও আওয়ামী লীগকে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা, লতিফ সিদ্দিকীর বিতর্কিত বক্তব্য এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত উল্লেখযোগ্য।  

৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ
বিগত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন করা ছিল আওয়ামী লীগের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত টানা হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যায়। এই সব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও চরম অস্থিতিশীল-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে বোমা-হামলা-সংঘর্ষ ও আগুনে পুড়ে  শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। যানবাহনে আগুন, বোমাবাজিরসহ বিভিন্ন নৈরাজ্যকর ঘটনায় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে। আন্তর্জাতিকভাবেও কোনো কোনো দেশ এই নির্বাচনের বিরোধিতা করে। ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত না হয় তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারা তা ঠেকাতে পারেনি। ” তবে দেশের ভেতরে বাইরে বিরোধিতা থাকলেও সংবিধান অনুযায়ি যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সরকার পরিবর্তন
প্রতিবেশী দেশ ভারতে সরকার পরিবর্তন ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয়। সে দেশের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে বিরোধী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসে। ভারতে ক্ষমতার এই পরিবর্তন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে বলে বিভিন্ন দিক থেকে গুঞ্জন ওঠে। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করে এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াতে হবে। নিদলীয় সরকারের অধীনের পুনরায় নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে দাবি করছে ভারতের নতুন বিজেপি সরকার সেই দাবির প্রতি সমর্থন দেবে বলেও তারা আশাবাদী হয়ে ওঠে। বিএনপির বর্জন ও বাধার মুখে গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই একটি প্রভাবশালী দেশও এই নির্বাচনের বিরোধিতা করে। তবে এই নির্বাচনে অকুণ্ঠ ও জোরালো সমর্থন দেয় ভারত। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায় এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি থাকায় এই সমর্থন সম্ভব হয়েছিল বলে মনে কর হয়। তাছাড়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়। বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই সম্পর্কের ছেদ পড়বে এবং নিদলীয় সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে আওয়ামী লীগ সরকার বাধ্য হবে বলেই কানাঘুষা হচ্ছিল। তবে এসব গুঞ্জনের অবসান ঘটে গত জুনে ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে। এই সফরকালে সুষমা স্বরাজ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের নির্বাচনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এদেশের জনগণ। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতের নতুন সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়।  
   
লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে বেকাদায় পড়ে সরকার
নিউইয়র্কে হজ্ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়েন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের দায়ভার সরকারের উপর চাপানোরও চেষ্টা চলে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ বিএনপিসহ ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোও সোচ্চার হয়ে উঠে। এমনকি সরকারের শরিক ও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়।

এসব রাজনৈতিক দল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলো হরতালসহ রাজপথের কর্মসূচির হুমকি দিতে থাকে। লতিফ সিদ্দিকীর বেফাঁস একটি ব্যক্তিগত বক্তব্যকে পুঁজি করে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টায় মাঠে নামে। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয় সরকার। বিদেশে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। পরে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয় এবং আওয়ামী লীগ থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। প্রায় দুই মাস পর দেশে ফিরলে গ্রেফতার করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। এখন তিনি কারাগারে।

নারায়গঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় সমালোচিত সরকার
চলতি এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা ও র্যাবের কমর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ এপিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনা তদন্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন, র্যাব কর্মকতা মেজর তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানার নাম উঠে আসে। তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই। এ ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পাশাপাশি সারাদেশেই ঘটনার প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। অপর আসামি নুর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। এখন সে কলকাতায় আটক রয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার পরপরই ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। নারায়গঞ্জের ৭ খুনের ঘটনার তোলপাড়ের মধ্যেই ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে ২০ মে পেট্রোল বোমা মেরে গাড়ির মধ্যে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।

সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি সম্মেলন শুরু
সাংগঠনিক দুর্বলতা ও স্থবিরতা কাটাতে চলতি বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত সেপ্টেম্বর থেকে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এই সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাংগঠনিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে পড়ে। দলের এক শ্রেণির নেতাকর্মী ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যায় পন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আবার ক্ষমতার প্রভাব এবং দলের মধ্যে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। নেতাকর্মীরা সংগঠনবিমুখ হয়ে পড়েন। এর ফলে সংগঠন স্থবির হয়ে পড়ে। এই সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রভাব পড়ে বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয়-সরকার নির্বাচনগুলোতে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণগুলোর মধ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা অন্যতম বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘদিনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার টার্গেট থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় সম্মেলন শেষ করতে জানুয়ারি পর্যন্ত গড়াবে বলে দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান।

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়
এ বছর ৯ জুলাই ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে আসে। এই রায়ে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিরেলামিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার পায় বাংলাদেশ। রায়ের পর এই এলাকায় বাংলাদেশের আইনগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার মামলায় বিজয় লাভ করে। এ সুবাদে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের মধ্যে ১২টি ব্লক বাংলাদেশ পায়।

এই দুটি মামলায় বিজয়ের মধ্য দিয়ে সাগরের বিশাল এলাকায় বাংলাদেশ একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার অর্জন করে। বর্তমান সরকারের জন্য এটি বিরাট সাফল্য। কারণ মামলা পরিচালনায় সরকারের যথাযথ তত্ত্বাবধানের ফলে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বড় আন্দোলন মোকাবেলা করতে হয়নি
৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি চুপসে যায়। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হলেও বড় কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি দলটি। কার্যত মিডিয়ায় প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির আন্দোলনের হুমকি। ফলে সরকারকে রাজনৈতিক চাপ বা আন্দোলনের ধাক্কা কাটতে হয়নি। যদিও আন্দোলন মোকাবেলায় প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুত ছিলো সরকার। সরকারের হাতে আন্দোলন ঠেকানোর বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিগত সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বারবার বলে এসেছেন গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হলে সরকার তা কঠোরভাবে দমন করবে। নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে সরকারবিরোধী কঠোর সহিংস কর্মসূচি। নির্বাচনের পর পরি্স্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা ছিলো সরকারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। সরকার সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হয়।

অন্তর্দ্বন্দ্বে বছর কাটিয়েছে ছাত্রলীগ
বছর জুড়েই বলতে গেলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন ছাত্রলীগ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। এসব ঘটনায় সমালোচিত হয় সরকার। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বুদ্ধিজীবী চত্বরে একসঙ্গে ফুল দিয়ে ফিরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের ভিএক্স ও সিএফসি গ্রুপ। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।

গত ২২ নভেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সংগঠনের কর্মী সুমন দাস নিহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত এক বছরে আরও কয়েক বার এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়াদ ইবনে মমতাজ নিহত হন। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই সায়াদকে হত্যা করে।

গত ৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রুস্তম আলী আকন্দকে সংগঠনের পদ নিয়ে নেতা-কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে জীবন দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৪ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলামকে। ঘটনার সঙ্গে  জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত ৩১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা তৌকির ইসলামকে। আসনে বসা নিয়ে বিবাদের সূত্র ধরে সাতকানিয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তাঁকে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। আহত তৌকিরকে টঙ্গীর নিমতলী থেকে উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

আলোচনায় ছিলো মন্ত্রী মহসিন আলী
প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। তিনি তুমুল বিতকের্র সৃষ্টি করেন সাংবাদিক সমাজকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে গিয়ে মঞ্চে বসেই প্রকাশ্যে ধূমপান করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। তার এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে অবশ্য এ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন মন্ত্রী। ৯ আগস্ট সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তোমাদের কোমর কীভাবে ভাঙতে হয় আমি তা জানি। খুব সতর্ক থাকবে। ধরলে কিন্তু ছাড়া হবে না। ’ তার একের পর এক এই বিতর্কিত কথাবার্তায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে সরকার ও দলের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫১ ঘন্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।