ঢাকা: সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অভিযুক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, রাজনীতির ভাষা এখন কলুষিত। আপনারা যে ভাষায় কথা বলছেন, যেসব কাজ করছেন, তা ভবিষ্যতে ভালো হবে না।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন খালেদা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান।
তিনি বলেন, আমাকে নাকি একেবারে মাইনাস করে দেবেন। যারা আগে মাইনাস করতে চেয়েছে, তারাই একসময় মাইনাস হয়ে গেছে। আমাকে মাইনাস করতে পারে একমাত্র জনগণ।
গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় সরকার ও প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে খালেদা বলেন, কোন কর্মসূচিই বিরোধীদলকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।
খালেদা বলেন, ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। ৠাব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। একটি অংশ ভাড়াটিয়া খুনির মতো আচরণ করছে।
এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে ৠাবের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের ওপর একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। জাতীয় সরকার বিরোধী দলবিহীন হয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কোনো বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেনি।
খালেদা বলেন, নতুন ও তরুণ ভোটাররা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এভাবে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা আকড়ে রেখেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ ও সব বিরোধীদলের চাওয়া সত্ত্বেও সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি মানছে না।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এ নিয়ে ৩ বার সংবাদ সম্মেলনে আসলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রথমবার ১৫ জানুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সে সময় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারকে বেশিদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় রাখা বিপজ্জনক হবে।
দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনটি করেন সদ্য শেষ হওয়া বছরের ৪ ফ্রেব্রুয়ারি। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে নিহত নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা তুলে ধরেন এবং অবিলম্বে সংলাপে বসতে সরকারকে আহ্বান জানান।
এর পর দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সভা-সমাবেশে ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অসংখ্যবার কথা বলেছেন তিনি।
বছরের শেষ দিনটিতে এসে হঠাৎ করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটি কৌতূহলের জন্ম দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, সারোয়ারী রহমান, খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভাপতি সফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুল মবিন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির চেয়ারম্যান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস পার্টির (পিএল) চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম, ডেমোক্রেটি লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দীন একরাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪