ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর অনলাইন থেকে নিয়ে ফটোশপের মধ্যেমে সাদা পাতায় বসিয়ে, মেয়াদউত্তীর্ণ লেটারহেড ব্যবহার করে বিবৃতি জালিয়াতি করেছে বিএনপি। আর এর মূল হোতা জাহিদ এফ সর্দার সাদি নামে ফ্লোরিডা নিবাসী একজন দলীয় নেতা।
২০১৩ সালের নভেম্বরে বিএনপি’র বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো এই জাহিদ এফ সর্দারকে।
দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো দলের পক্ষে বিদেশি কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াঁজো ও লবিং করার।
তারই অংশ হিসেবে দলের হয়ে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভূয়া বিবৃতি ঢাকায় পাঠিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন এই জাহিদ এফ সর্দার।
ভূয়া বিবৃতি তৈরি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ বাংলানিউজের হাতে পৌঁছেছে।
দেখা গেছে যে লেটার হেডে জাহিদ বিবৃতিটি তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন সেটির সঙ্গে পরে ওই বিবৃতির কথা অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স যে লেটার হেডে বক্তব্য পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ওয়ান হান্ড্রেড থার্টিনথ কংগ্রেস নামে যে লেটার হেডটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটির নিঃসন্দেহে পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। এই কংগ্রেসের মেয়াদ শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি যা শেষ হয় ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারিতে।
এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা কোনওভাবেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে লেটারহেডে এই বিবৃতি পাঠাবেন না। গত ৬ জানুয়ারি ছিলো নবনির্বাচিত ১১৪তম কংগ্রেসের অভিষেক। অভিষেকের পর কংগ্রেস সদস্যরা ১১৩তম কংগ্রেসের লেটারহেডে স্বাক্ষর করবেন না তাও নিশ্চিত করে বলা যায়।
এবার আসা যাক স্বাক্ষর প্রসঙ্গে। জাহিদ এফ সর্দার সাদি যে প্যাডে তার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বিবৃতি লিখেছেন পাঁচ কংগ্রেসম্যান ও এক কংগ্রেস ওম্যানের স্বাক্ষর কিন্তু সেই প্যাডে ছিলো না। স্বাক্ষর সম্বলিত অংশটি স্রেফ সাদা কাগজের। আর তার ওপরে শুধু এটুকুই লেখা ‘জানুয়ারি ০৭, ২০১৫ পেজ টু’।
কংগ্রেসের সদস্য এলিয়ট এল এঞ্জেল, এডওয়ার্ড আর রয়েস, স্টিভ চ্যাবট, জোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেং‘র নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে তাতে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই সাক্ষর তারা কিভাবে দিলেন। আর একটি সাদা পাতায় কেনই স্বাক্ষর দিলেন। আর এদের সবাইকে এক সঙ্গে কোথায়ই পাওয়া গেলো।
এদের মধ্যে ক্রাউলি, মেং ও এলিয়ট নিউইয়র্কের, রয়েস ক্যালিফোর্নিয়ার, চ্যাবট ওহাইওর, হোল্ডিং নর্থ ক্যারোলিনার। আর জাহিদ এফ সর্দারের বাস ফ্লোরিডায়।
দায়িত্বশীলরা মনে করেন স্রেফ জালিয়াতি করেই অনলাইনে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর নিয়ে, ফটোশপে কাজ করে এই বিবৃতি তৈরি হয়েছে।
এক জাহিদ এফ সর্দার সাদির জালিয়াতিতে ডুবেছে বিএনপি। আর সার্বিকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি, এমনটাই মনে করেন তারা।
কে এই জাহিদ এফ সর্দার সাদি? ফেসবুকে তার একটি নিজস্ব পেজ রয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র বিশেষ উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত। এছাড়া তিনি ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে কোয়ালিটি গ্রুপ নামে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও।
এটা নিশ্চিত বিএনপি’র গঠণতন্ত্র মতে, দলের কোনও উপদেষ্টার পদ নেই। তবে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ রয়েছে। কিন্তু জাহিদ এফ সর্দার সাদি নিয়োগ পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা হিসেবে। সে নিয়োগ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তার স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রটির কপি বাংলানিউজের হাতে পৌঁছেছে। এতে ফখরুল স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, দলের চেয়ারপার্সদের নির্দেশেই জাহিদ এফ সর্দারকে বিএনপির উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। তিনি এও লিখেছিলেন, জাহিদ এফ সর্দারের কাজ হবে বিদেশি কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াঁজো ও লবিং করা।
এ কাজে জাহিদ সর্দারের সাফল্যও কামনা করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তবে যে সাফল্য জাহিদ সর্দার দেখাতে চেয়েছিলেন তা ছিলো স্রেফ জালিয়াতি নির্ভর ও প্রতারণা। স্বাক্ষর জাল করা যুক্তরাষ্ট্রের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ নিঃসন্দেহে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেস ও কমিটি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এবং এ ব্যাপারে গভীর অনুসন্ধান চলছে।
বাংলাদেশ সময় ১৯৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
** যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির বিবৃতি জালিয়াতি, হোতা জাহিদ