ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

পেট্রোল বোমায় নিহত ৭

কাতার যাওয়া হলো না ইউসুফ ও আবু তালেবের

তুষার তুহিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
কাতার যাওয়া হলো না ইউসুফ ও আবু তালেবের

কক্সবাজার: অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দূরদেশ মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছিলেন কৃষক ইউসুফ ও আবু তালেব।

এজন্য কাগজপত্র আর টাকা পয়সার ঝক্কি-ঝামেলা শেষ করে সব গুছিয়ে এনেছিলেন তারা।

শুভযাত্রার দিনও ঠিক। কেবল উড়োজাহাজে ওঠার বাকি। কিন্তু তাদের ও পবিবারের সে স্বপ্ন কেড়ে নিলো পেট্রোল বোমার আগুন।

৪ ফেব্রুয়ারি কাতার যাওয়ার কথা ছিল কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের গাইনাকাটা এলাকার মৃত হাজী সালেহ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (৫০) ও একই এলাকার মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আবু তাহেরের। কিন্তু যাওয়া হলো না তাদের। তার আগেই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তাদের বহনকারী বাসে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমার আগুন নিভে গেলো তাদের জীবন প্রদীপ। পরিবারের সব আশা-ভরসা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, অস্বচ্ছল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আনতে তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার যাচ্ছিলেন। বুধবার রাত ১০টায় ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের উদ্দেশে তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল।

এ জন্য সোমবার সন্ধ্যায় দু’জনই স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু কে জানতে পথেই চির বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের। মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৪টায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়ারবাজার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ‍ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসে আগুন লেগে পুড়ে মা‍রা যায় ইউসুফ ও আবু তালেবসহ ৭ যাত্রী। আহত হয় অন্তত ২৬ জন।

তাদের মত্যুর সংবাদ শোনার পর ইউসুফ ও আবু তাহেরের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে এলাকা।
 
আবু ইউসুফের বাবা সালেহ আহমদ ও মা ফাতেমা বেগম ছেলের মৃত্যুশোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। খবর শোনার পর তারা দুইজনেই ডুকরে ডুকেরে কেঁদে চলেছেন।

ইউসুফের মা বিলাপ করে বলেন, ‘কী দোষ ছিল তার ছেলের। কাতার যাওয়ার জন্য যে জমিজমা ছিলো, তাও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এমন কী ইউসুফের বিবাহিত মেয়ের স্বর্ণালঙ্কারগুলোও বিক্রি করে দেয়।

স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে স্ত্রী ফরিদা বেগম বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন আর বাড়িতে আসা লোকদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।

একই অবস্থা পাশের বাড়িতে নিহত আবু তাহেরের বাড়িতেও। আবু তাহেরের বৃদ্ধ মা আনোয়ারা বেগম ছেলের শোকে পাথর হয়ে গেছেন। স্ত্রী নুরজাহানও দু’টি সন্তান নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুজনের কারো মৃতদেহ কুমিল্লা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি।

এদিকে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন একই উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ছৈয়দ আহমদের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (২১) ও একই এলাকার নিহত ইউসুফের ছোট ভাই মো. হানিফ (৩৫)।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

** নাশকতার শিকার ও অকেজো ১শ’ রেলকোচ মেরামতের উদ্যোগ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।