ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের মধ্যেও অধিকাংশ দিন থাকছে হরতাল। তবে চোরাগোপ্তা পেট্রোল বোমা হামলা আর ককটেল বিষ্ফোরণ ছাড়া মাঠে নামতে দেখা যায় না বিএনপি-জামায়াতের কাউকেই।
এদিকে, মাঠে আগের চেয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
কিন্তু এর মধ্যে নাশকতা আর চোরাগোপ্তা হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যারা পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই পেটের তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। ঘর থেকে বের হলে ঠিকমতো, সুস্থ শরীরে ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা এই আতঙ্কে দেশজুড়ে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে।
এ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
সংলাপের ইঙ্গিত এখন অনেক দূর বলেই মনে করছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির পাশাপাশি সহিংসতা ও নাশকতায় বহু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও থামছে না গাড়ি পোড়ানো আর পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা।
আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, এখন মাঠে আছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি মাঠে নেই। তারা শুধু কর্মসূচি দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর ও কঠোর হতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে চাই। জয় ১৪ দলের হবেই।
৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দেশজুড়ে মানববন্ধন করে মাঠে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চান তারা।
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (অব.) মেজর হাফিজ উদ্দিন মনে করেন, দলের চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।
বিএনপির রাজপথে না থাকা আর মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা দুর্বৃত্তদের কাজ। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে। বর্তমান সরকার একটি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছে।
আবার দলটির মধ্যমসারির কয়েকজন নেতা বলেন, পুলিশি বাধা বা হয়রানির মুখে কিছু আতঙ্ক তৈরি করা তাদের আন্দোলনের কৌশলের ছিল। তবে এটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার বিষয়ে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য হরতাল-অবরোধের দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কার্যালয় সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে জড়ো হয়ে মিছিল, মানববন্ধন ও বক্তৃতা করবেন।
অপরদিকে, বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, সরকারকে নমনীয় না করা পর্যন্ত অবরোধ-হরতাল ছাড়া বিকল্প কর্মসূচিতে তারা যাবেন না। সংলাপে বাধ্য করে নির্বাচনের দাবিতে চলবে তাদের সব আন্দোলন।
তবে নাশকতাকে সামনে এনে বিএনপির নির্বাচনের দাবি সরকার পেছনে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন জামায়াত বিএনপির কয়েকজন নেতা।
তাদের কেউ কেউ বলেন, মাঠে পুলিশের সক্রিয়তার কারণে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই মাঠে নামতে হচ্ছে। তবে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নতুন করে ভীতি তৈরি করেছে বিরোধী জোটের মধ্যে। এ অবস্থায়ও ওপর মহল থেকে অবরোধ-হরতালে নিরাপদে থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা পাচ্ছেন তারা।
দু’দলের দু’দিকে কঠোর অবস্থানে উদ্বিগ্ন দেশের সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুনুর রশীদ বলেন, সহিংসতা রাজনীতি নয়। বর্তমান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। পেট্রোল-বোমাবাজি, মানুষ পুড়িয়ে মারা এগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে নিয়ে আসা জাতির জন্য লজ্জাজনক। যত দ্রত সম্ভব, এর থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। এজন্য আন্তরিক হতে হবে সব দলকেই।
দেশের খ্যাতনামা অধ্যাপক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত বলেন, আগে রাজনীতিকরা বলতেন, দেশের সেবা করার সুযোগ দিন। কিন্তু এখন আমরা কী দেখতে পাচ্ছি!
তিনি বলেন, একজন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছেন, আরেকজন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া। এ অবস্থায় সংলাপ সমাধান নয়। তাদেরকেই সরে যেতে হবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কেউ এমনটি করে না।
খ্যাতিমান নাট্যঅভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দুই দল প্রধানের (হাসিনা ও খালেদা) একটি আপসসভা আজ বড়ই প্রয়োজন। এখানেই সব সমস্যার সমাধান। সহিংসতা কোনো সমাধান নয় আর সংলাপ থেকে দূরে থাকাও দেশের জন্য মঙ্গল নয়- এটা দুই নেত্রীকেই বুঝতে হবে।
সঙ্গীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল বলেন, সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি কোনোভাবেই সভ্য বলতে পারি না।
তিনি জানান, তার মেয়ে একমাস ধরে স্কুলে যেতে পারছে না। আবার এ অবস্থায় নিজের শিল্পঅঙ্গনেও কাজ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫