ঢাকা: আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিঘ্নিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কী চান বা কী পাবেন- তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এ প্রশ্ন ছোঁড়েন।
বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংসতা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহিংসতা বন্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সরকার নেবে। এজন্য জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
বিএনপি জোটের কর্মসূচির মধ্যেই শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষার মধ্যে কর্মসূচি না দিতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি বিএনপি নেত্রীকে এটুকু বলবো- পরীক্ষার সময় যেন হরতাল অবরোধ না দেন। ছেলে-মেয়েদের শান্তিতে পরীক্ষা দিতে দেন। তাদের যেন আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে পরীক্ষা দিতে না হয়। তিনি কর্মসূচি দিলে যে পরীক্ষার পরে দেন। ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিক, তারপর তিনি হরতাল-অবরোধ করুন।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিঘ্নিত করছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) আসলে কী চান? বিএনপি-জামায়াত উন্মাদের পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষের বিরুদ্ধে যেন তাদের সংগ্রাম। মানুষকে পুড়িয়ে মেরে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কাকে বলে? এত জঘণ্য ঘটনা আর কোথাও কেউ দেখেনি। মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া কোনো জিঘাংসা চরিতার্থ করতে চান। সেটাই তিনি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা গেল, আমি সহানুভূতি জানাতে গেলাম। তিনি তার কার্যালয়ে তালা মেরে দিলেন। এরকম অভদ্রতা কেউ করেছে কিনা জানা নেই।
বিএনপি ও তার নেত্রী দেশ ও মানুষের ভালো দেখতে পারেন না অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেখে তাদের সহ্য হচ্ছে না। আর সেজন্য দেশের মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এ সব সহিংসতার টাকা তারা কোথা থেকে পাচ্ছে? তারা আইএসের মতো জঙ্গি কায়দায় মানুষ মারছে। আইএসও মানুষ পুড়িয়ে মারছে, খালেদা জিয়াও মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। তাহলে আইএসের সঙ্গে তার তফাত কী?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা পুড়ে মারা যাচ্ছে তাদের কেমন করুণ মৃত্যু হচ্ছে তা কি তারা বোঝেন? তাদের মায়ের ব্যাথা কি আপনি উপলব্ধি করছেন না? আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের কী যে জ্বালা নিয়ে থাকতে হচ্ছে, তাও কি তারা বোঝেন? তারা ভবিষ্যতে কী করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা অবরোধ ডেকে বসেই আছেন। পুত্রবিয়োগের শোকও তাকে টলাতে পারলো না। ছেলের লাশ বাড়িতেও নেওয়া হয়নি। কতটা নিষ্ঠুর তিনি। কীসের আশায় একটার পর একটা লাশ ফেলছেন? দেশের জান-মাল ধ্বংস করছেন? বাংলাদেশ ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন? এটাই যেন তার প্রতিজ্ঞা। যেন দেশটাকে জল্লাদখানা বানাতে চাইছেন।
খালেদা জিয়া ‘হিরোইনের’ মতো কার্যালয়ে বসে আছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিভিন্ন দলের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন। আর মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। যাকে পুত্রশোকও ছুঁয়ে যায় না, তাকে অবরোধ-সহিংসতায় মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু টলাবে কী করে?
বিএনপি জামায়াত হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীসের আবার পরীক্ষা’ একথা কোনো নেতাই বলতে পারেন না। আসলে মানুষের রক্তই বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রেরণা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে তারা ধ্বংস করতে চায়। এর বিরুদ্ধে মানুষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। যে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই, সে আন্দোলন কীসের আন্দোলন? ওনার আর কত লাশ চাই? কত লাশ হলে ওনার তৃপ্তি হবে?
এ ধরনের প্রাণঘাতী সহিংসতা রুখে দিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫/আপডেট ২০০১ ঘণ্টা/ আপডেট ২১২৮ ঘণ্টা