ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ময়মনসিংহ বিএনপি

আড়ালে নেতারা, ক্ষোভে দিশেহারা কর্মীরা !

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫
আড়ালে নেতারা, ক্ষোভে দিশেহারা কর্মীরা !

ময়মনসিংহ: শুক্রবার ( ৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি।

বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রঘোষিত এ কর্মসূচিতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত থাকলেও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কোতোয়ালি বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ ওয়ালিদ উপস্থিত ছিলেন না।



টানা ১ মাস যাবত চলমান অবরোধ-হরতালের কর্মসূচির বেশিরভাগ সময়ে নিজেকে গুটিয়ে উপজেলা পরিষদের কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন নাসিরাবাদ কলেজ ছাত্র সংসদের (নাকসু) সাবেক ভিপি কামরুল ইসলাম।
 
ময়মনসিংহ শহর বিএনপির সভাপতি এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলামকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের নেতৃত্বে মিছিল হলেও শহর বিএনপি বিস্ময়করভাবে নিশ্চুপ !

অধ্যাপক শফিকের মুক্তির দাবিতে মিডিয়া ফ্রেমে একবারের জন্যও বন্দি হতে পারেনি শহর কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা, এমন অভিযোগ তৃণমূলের কর্মীদের।

রহস্যময় অন্তর্ধানে রয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রোকনোজ্জামান সরকার রোকন। ৫ জানুয়ারির আগে আন্দোলনে কারাবরণ করলেও এবার শুরু থেকেই খোঁজ মিলছে না দক্ষিণ জেলা বিএনপির এ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের। এমনকি তার মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।

তবে তার অনুসারীদের দাবি, নিজে আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকলেও কর্মীদের মাঠে ঠিকই সক্রিয় রেখেছেন রোকন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কার্যত নিষ্ক্রিয় আন্দোলন- সংগ্রামের ‘ভ্যানগার্ড এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা সুজাও। রাজপথে নামার ঝামেলা এড়িয়ে চলছেন জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মফিদুল ইসলাম মোহন। দলীয় পরিমন্ডলে‘ সুবিধাভোগী’ হিসেবে পরিচিত এ নেতাকে দলীয় কোনো কর্মসূচিতেও দেখা যায় না। একই অবস্থা অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের বেলাতেও।

সরকার পতন আন্দোলনের কঠিন সময়েও হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন আতঙ্কসহ নানা অজুহাতে সিংহভাগ অনেক নেতাই নিজেদের ঘরমুখো কিংবা আড়ালে-আবডালে রেখে দলীয় রাজনীতির সরল পাটিগণিত অনেকটাই গরল করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে পক্ষে-বিপক্ষের আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠছে চায়ের কাপে।

মাঠে নেমে আন্দোলন-সংগ্রাম করে কারাগারে যাওয়ার বিষয়ে মোটেও আগ্রহ নেই ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের ! চলমান আন্দোলনের ছক তৈরির সময় থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যত দলীয় কর্মকাণ্ডে গৌণ ভূমিকায় আছেন ঢাকায় কৌশলে সটকে থাকা এসব নেতারা।

ময়মনসিংহ সদর ও শহরে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ ও তারাকান্দা উপজেলায় উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার ছাড়া বাদ বাকি ১১ উপজেলার শীর্ষ নেতারা সরকার পতনে রাজপথের আন্দোলনে সরব না থেকে অজ্ঞাত কারণে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন।

দলীয় সূত্রের তথ্যমতে, তুঙ্গে থাকা হরতাল-অবরোধ আন্দোলনে দেখা মিলছে না হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় আফজাল এইচ খান, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আলী আজগর, ফুলপুরের শাহ শহীদ সারোয়ার, গৌরীপুরের ইঞ্জিনিয়ার মকবুল হোসেন বকুল ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, মুক্তাগাছার জাকির হোসেন বাবলু, ফুলবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ ও ত্রিশালের ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনের।

একই অবস্থা ঈশ্বরগঞ্জের শাহ নুরুল কবির শাহীন, লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ওরফে কালা বাবু, নান্দাইলের খুররম খান চৌধুরী, গফরগাঁওয়ের ফজলুর রহমান সুলতান ও এ.বি.এম.সিদ্দিকুর রহমান, ভালুকার ফখরুদ্দিন বাচ্চু ও মোর্শেদ আলমের। তারাও গা বাঁচিয়ে চলছেন। এসব নেতাদের ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ ও দিশেহারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া মাঠের কর্মীরা।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের সকলেরই আন্দোলন নিয়ে দায়সারা ভূমিকা। দুঃখজনক হলেও সত্য তারা আবার নিজেদের উপজেলা ইউনিটের সভাপতি। তাদের টেলিফোন করলে কেউ রিসিভ করেন না আবার কেউ কেউ বলেন এলাকার বাইরে আছেন।

এ সময় তিনি দল ও দেশের স্বার্থেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান।

যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, উত্তরের আহ্বায়ক খুররম চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত ঢাকায়। প্রতি উপজেলায় তিনি একক স্বাক্ষরে সাবেক জাতীয় পার্টির নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন তারাও তার মতোই পালিয়েছেন। উত্তরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কিংবা বড় নেতারাও ঢাকায়। এ অবস্থায় এককভাবে আমাকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।